আদিতমারীর ‘রক্ত গরম’ উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে একাট্টা কর্মকর্তারা

লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. ফারুক ইমরুল কায়েসের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ এনে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন ইউএনওসহ ১৮ কর্মকর্তা। ‘অসদাচরণ, দুর্ব্যবহার ও হুমকি-ধামকির বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের’ জন্য ওই আবেদন পেয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন জেলা প্রশাসক মো. আবু জাফর। আবেদনের অনূলিপি পাঠানো হয়েছে লালমনিরহাট-২ আসনের সাংসদ ও সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ এবং রংপুরের বিভাগীয় কমিশনারের কাছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার, ১২ নভেম্বর সর্বশেষ একটি ঘটনার প্রেক্ষিতে ওইদিন সন্ধ্যায় প্রথমে জেলা প্রশাসকের সাথে দেখা করেন ওই কর্মকর্তারা। পরে লিখিতভাবে বিষয়গুলো জানানো হয়। একই দিন রাতে উপজেলা চেয়ারম্যান সাংবাদিকদের ডেকে সব অভিযোগ ‘মিথ্যা ও বানোয়াট’ বলে দাবি করেছেন।

লিখিত অভিযোগ ও প্রত্যদর্শীরা জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে উপজেলা পরিষদের মাসিক সমন্বয় সভা চলাকালীন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েস উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কাছে ভিজিডি ও মাতৃত্বকালীন ভাতার কার্ডের অংশ দাবি করেন। তবে দাবি নাকচ করে ইউএনও মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন বিধি অনুযায়ী তালিকা প্রনয়ণের কথা জানালে ক্ষিপ্ত হয়ে সভাস্থল ত্যাগ করেন উপজেলা চেয়ারম্যান। কিছুক্ষণ পরে ইউএনও অফিসের করিডোরে লাগানো সিসি টিভি ক্যামেরাকে কেন্দ্র করে তর্কাতর্কি শুরু হয় ইউএনওর সাথে।

এ সময় চেয়ারম্যান ইউএনওকে উদ্দেশ্য করে ‘বেশি কথা বললে পিটিয়ে নরসিংদী পাঠিয়ে দিব’; ‘উপজেলা পরিষদ কি তোর বাবার সম্পত্তি, উপজেলা পরিষদ কী তুই চালাবি’ এ ধরণের কথা বলতে শুরু করেন। এসময় উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা চেয়ারম্যানকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করলে উত্তেজিত চেয়ারম্যান ওই কর্মকর্তাকে ‘ঘার ধরে উপজেলা পরিষদ থেকে বের করে দিব’ বলেও হুমকি দেন। অন্যান্য অফিসাররা এ ঘটনার প্রতিবাদ জানালে তাদেরকেও গালিগালাজ করেন চেয়ারম্যান। পরে সেখানে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনেন।

লিখিত আবেদনে আদিতমারী উপজেলা প্রশাসনের বেশ কয়েকটি দপ্তরের প্রধানদের নাম ও ঘটনা উল্লেখ করে উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে গালিগালাজ, অসদাচরণ, হুমকিসহ নানা ধরণের অভিযোগ আনা হয়েছে। আবেদনে উপজেলা পরিষদের কর্মকর্তাদের পক্ষে স্বাক্ষর করেছেন ইউএনও মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন। আবেদনের সাথে অন্যান্য কর্মকর্তাদের দুই পাতার সাক্ষর যুক্ত করা হয়েছে। এতে স্বাক্ষর করেছেন উপজেলা মহিলা বিষয়ক, মৎস্য, নির্বাচন, পল্লী উন্নয়ন, শিক্ষা, পরিসংখ্যান, শিক্ষা, যুব উন্নয়ন, পরিচালনা ও উন্নয়ন, প্রাণী সম্পদ, প্রকল্প বাস্তাবায়ন ও কৃষি কর্মকর্তা, উপজেলা প্রকৌশলী এবং সাব-রেজিস্ট্রারসহ আরও ১৭ কর্মকর্তা।

আবেদনে, বিভিন্ন কর্মকর্তার বরাতে ‘আমার বয়স ৩২ বছর, আমার রক্ত গরম আছে, আমি তোকে দোতলা থেকে ফেল দেব’। ‘আমার কথামত কাজ না করলে রুমে নিয়ে বেঁধে পেটাবো’। ‘বেশি কথা বললে পিটিয়ে নরসিংদী পাঠিয়ে দেব’। ‘উপজেলা পরিষদ কি তোর বাবার সম্পত্তি, উপজেলা পরিষদ কী তুই চালাবি’। ‘বেয়াদবটাকে গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দাও’- বিভিন্ন সময়ে ফারুক ইমরুল কায়েস এ ধরণের নানা উক্তি করেছেন বলে আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। পাশাপাশি কৃষি, সমাজসেবাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম বিঘিœত করারও অভিযোগ করা হয়েছে উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে।

জানতে চাইলে আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘উপজেলা চেয়ারম্যানের কারণে সৃষ্ট পরিবেশে কাজ করা সরকারি কর্মকর্তাদের কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই বাধ্য হয়ে আমরা জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেছি’।

আদিতমারী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. ফারুক ইমরুল কায়েস বলেন, ‘আমরা সবাই একটি পরিবারের মতো। ফলে একসাথে চলতে গেলে কিছু ভুলত্রæটি থাকবে। এগুলো নিজেরাই ঠিক করতে পারতাম। কিন্তু ইউএনও সেটি না করে আমার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছেন’। বিভিন্ন সময়ে অন্যান্য কর্মকর্তাদের গালাগাল ও লাঞ্চিত করার বিষয়গুলো মিথ্যা ও বানোয়াট বলে দাবি করেছেন উপজেলা চেয়ারম্যান।

লিখিত ও মৌখিকভাবে অভিযোগ পাওয়ার কথা জানিয়ে জেলা প্রশাসক মো. আবু জাফর বলেন, ‘অভিযোগ তদন্তের জন্য লালমনিরহাট স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালককে (ডিডিএলজি) দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে’।

এইচএ/রাতদিন