উৎসাহ-উদ্দীপনায় লালমনিরহাটে ভোটে নেতা নির্বাচন

প্রায় ১০ দিন থেকে মাইকিং পোস্টার লাগিয়ে প্রচার করেছেন প্রার্থীরা। প্রার্থীতা যাচাই-বাছাইও হয়েছে। বাছাই শেষে বৈধ প্রার্থী ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। তবে এটি কোন জাতীয় বা ইউনিয়ন নির্বাচন নয়। তৃনমুল কর্মীদের মুল্যায়ন করতে লালমনিরহাটে প্রত্যক্ষ ব্যালোট ভোটে ওয়ার্ড কমিটি গঠন করছে বিএনপি।

শুক্রবার( ১ অক্টোবর) বিকাল তিনটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নের চারটি ওয়ার্ডের বিএনপির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদের প্রার্থী নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়। নির্ধারিত নির্বাচনের নির্ধারিত দিনে ভোটাররা লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট প্রয়োগ করেছেন।

পরে সন্ধ্যায় ফলাফল ঘোষণা করেন জেলা যুবদলের আহবায়ক কমিটির সদস্য সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও  মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নের ভোটের রির্টানিং অফিসার অ্যাডভোকেট মহিউদ্দিন আহমেদ লিমন।

হাড়ীভাঙ্গা দরগারপাড় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, কাশিপুর উচ্চ বিদ্যালয়, চিনিপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ঢেপঢেপিরহাট দাখিল মাদরাসা। মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নের ১, ২, ৪ ও ৫ নং ওয়ার্ডে এ চারটি কেন্দ্রে মোট ভোটার সংখ্যা ৩হাজার ৫৫০জন। যার মধ্যে মহিলা ভোটার ১হাজার ২১০ জন।

ভোটগ্রহণে ছিল প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসার, ছিল ভোটের বাক্স। আর এ ‘ভোট উৎসব’ অন্যকোনো সাধারণ নির্বাচন নয়। তৃণমূল বিএনপির সদস্যরা প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে তাদের নেতা নির্বাচন করতে পেরে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।

হাড়ীভাঙ্গা দরগার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিতে এসেছিলেন শারীরিক প্রতিবন্ধি আকবার আলী (৬০)। এসময় তিনি বলেন, ‘হামার নেতা তারেক রহমানের নির্দেশে নেতা বানবার জন্য আইজ ভোট দিবার আসছি’। সুষ্ঠুভাবে ভোট দিতে পেরে তিনি সন্তষ্টি প্রকাশ করেন। ওই কেন্দ্রেই ভোটার জয়নাল আবেদীন (৪৫) বলেন, ‘আগে নেতারাই নেতা নির্বাচন করে দিত। কিন্তু এবার আমাদের নেতা আমরাই ভোটের মাধ্যমে ঠিক করতে পেরে খুশি’।

বিএনপি’র নেতাকর্মীরা জানান, দলের উচ্চ পদস্থ নেতাদের আর্শিবাদপুষ্টরা টাকার জোরে দলের নেতা নির্বাচিত হন। এসব নেতা তৃণমুলের সদস্যদের প্রায় সময় অবমুল্যায়ন করেন। তাই প্রত্যক্ষ ব্যালোট ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচনের উদ্যোগ গ্রহন করে বিএনপি। লালমনিরহাটে শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে ওয়ার্ড পর্যয়ের নেতা নির্বাচনের ভোট গ্রহন। উৎসব মুখর পরিবেশে লাইনে দাঁড়িয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করছেন দলটির সদস্যরা। ইতোমধ্যে দলটি ১০ টাকা মুল্যের একটি ফরমের মাধ্যমে সদস্য সংগ্রহ অভিযান শেষ করেছে। প্রতিটি সদস্য চলমান নির্বাচনে সংশ্লিষ্ঠ ওয়ার্ডের নেতা নির্বাচনে ভোটার হিসেবে বিবেচিত হয়েছেন।

জেলা বিএনপি দাবি করেছে, তৃণমূল পর্যায়ে ভোটের মাধ্যমে দলীয় নেতা নির্বাচনের ঘটনা এটাই প্রথম। দলের সিনিয়র মহাসচিব তারেক রহমানের নির্দেশে ভোটের মাধ্যমে তৃণমূল নেতা নির্বাচন করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে লালমনিরহাট জেলার পাঁচ উপজেলার সবগুলো ওয়ার্ডে এভাবে নেতা নির্বাচিত হবে।

জেলা যুবদলের আহবায়ক কমিটির সদস্য সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মহিউদ্দিন আহমেদ লিমন মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নের ভোটের রির্টানিং অফিসারের দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি বলেন, সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৫টিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভাপতি, সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। একাধিক প্রার্থী হওয়ায় বাকী ৪টি ওয়ার্ডে ভোট গ্রহন করা হচ্ছে। ভোট গ্রহন শেষে ফলফল ঘোষনা করে বিজয়ীকে সংশ্লিষ্ঠ পদের দায়িত্ব অর্পন করা হবে।

ভোট কেন্দ্রে উপস্থিত সদর উপজেলা বিএনপি’র আহবায়ক সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান একেএম মমিনুল হক সাংবাদিদের  বলেন, তৃণমুলের কর্মীদের প্রত্যক্ষ ভোটে ওয়ার্ড কমিটি এবং ওয়ার্ড কমিটির মাধ্যমে ইউনিয়ন ও উপজেলা কমিটি গঠন করা হবে। তৃণমুলকে চাঙ্গা করতে বিএনপি চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে ও বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলুর দিকনির্দেশনায় ব্যাতিক্রম এ ভোটের আয়োজন। এছাড়াও আওয়ামীলীগের ভোট ডাকাতির কারনে মানুষ আজ ভোট দেয়ার অধিকার হারিয়েছে। তা পুনরুদ্ধারে ভোটের মাধ্যমে তৃণমুলের কমিটি গঠন করা হচ্ছে। এ কমিটি আন্দোলনের মাধ্যমে অবৈধ এ সরকারকে হটিয়ে গণতন্ত্র পুনপ্রতিষ্ঠা করবে।

এনএ/রাতদিন