এসি রুমে থেকে আমাদের তামাশা দেখছে

‘আমি এখনো পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোনো কর্মকর্তাকে দেখি নাই। তারা খোঁজ-খবর নেয়নি। এসি রুমে থেকে আমাদের তামাশা দেখছে। চোখের সামনে সবকিছু ভেসে গেল। হাজার চেষ্টা করেও কিছুই রক্ষা করতে পারিনি। আল্লাহর কাছে বিচার দিয়ে রাখলাম। যা করার তিনিই ‌‍করবেন।’

শুক্রবার (২২ অক্টোবর) সকাল ১০টার দিকে রাস্তার পাশে বসে কাঁদতে কাঁদতে কথাগুলো বলছিলেন ৮০ বছরের বৃদ্ধ মাইছার আলী। তিনি লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা। হঠাৎ বন্যায় সবকিছু হারিয়ে আজ নিঃস্ব তিনি। এ কারণেই তার এমন বিলাপ।

মাইছার আলীর পাশে বসে আছেন স্ত্রী হামিদা বেগম। তিনিও বিলাপ করছেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, প্রতিবছর মাটি কেটে কষ্টের টাকায় ঘর করেছিলাম। কিন্তু সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি নদীর ভাঙনে সব কিছু নিয়ে যাচ্ছে। এতবার জনপ্রতিনিধিকে ফোন করেছি। কিন্তু তারা কোনো খবর নিল না। এখন আমরা কোথায় গিয়ে দাঁড়াব।

কথা হয় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত আরিফা বেগমের সাথে। তিনি বলেন, মহিষখোচা বাজার থেকে সলেডি স্প্যার বাঁধ সড়কের ভাটিতে ৮ শতাংশ জমি বন্দক নিয়ে ২টি ঘরে সন্তানদের নিয়ে বাস করতাম। কিন্তু ভারতের পানি এসে হঠাৎ বন্যা দেখা দেয়। এতে পানিবন্দী হয়ে পড়ি। সন্ধ্যার পর পানির চাপ বেড়ে গেলে সড়ক উপচে পানির স্রোত বইতে শুরু করে। তখন হাঁস, মুরগি ও সন্তানদের নিয়ে দ্রুত চলে যায় নিরাপদ স্থানে।

এমন পরিণতি শুধু আরিফা বেগমের নয়। পার্শ্ববর্তী উপজেলা কালীগঞ্জ রুদ্রেশ্বর বাঁধে বাস করা দিনমজুর মতিয়ার রহমান, আব্দুল মতিনসহ অনেকের ঘর বাড়ি বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। কিছুই রক্ষা করতে পারেনি তারা। অসময়ে এমন বন্যায় লণ্ডভণ্ড হয়েছে তিস্তা পাড়ের কাঁচা-পাকা রাস্তা, গাছ-পালা ও ঘর-বাড়ি।

এ ছাড়া উজানের ঢেউয়ে প্রথম আঘাত পড়ে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম ইউনিয়নে। সেখানেও পানিবন্দী হয়ে পড়ে প্রায় দেড় হাজার পরিবার। তাদের মধ্যে শুকনো খাবার বিতরণ করে উপজেলা প্রশাসন।

এদিকে বন্যার পানির চাপে ভেঙে গেছে কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা রংপুর সংযোগ সড়ক। এ ছাড়া তিস্তা ব্যারেজের ফ্লাড বাইপাস ভেঙে গেছে। এলাকায় বিদ্যুতের খুঁটি পড়ে যাওয়ায় অনেক এলাকা অন্ধকারে রয়েছে। বন্যার ছোবলে ভেঙে গেছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ।

বুধবারের সৃষ্ট বন্যার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে উন্নতি ঘটলেও কৃষিতে সর্বাধিক ক্ষতি হয়েছে বলে স্থানীয়দের দাবি। উঠতি ফসল পাকা ও আধাপাকা আমন ধান বন্যার পানিতে ডুবে নষ্ট হয়েছে। নষ্ট হয়েছে শত শত হেক্টর বাদাম, আলুসহ নানান সবজি খেত। ভেসে গেছে শত শত পুকুরের মাছ।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক (ডিসি) আবু জাফর বলেন, বন্যার্তদের জন্য ৭০ মেট্রিক টন চাল ও ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ত্রাণ বিতরণ শুরু হয়েছে। পানি কমে যাওয়ায় বন্যা পরিস্থির উন্নতি হয়েছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করা হচ্ছে। তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে।

এনএ/রাতদিন