ওয়াহিদা খানমের মেয়েকেও হত্যার হুমকি দিয়েছিল দুর্বৃত্তরা

‘বুধবার দিবাগত রাত ৩টা-সাড়ে ৩টার দিকে তাহাজ্জুদ নামাজ পরে কেবল শুয়েছিলাম। ঘুম ঘুম লাগছিল। এমন সময় মেয়ের চিৎকার শুনে ওপর তলায় যাই। মেয়ে তখন আমাকে ডাকছিল আর বলছিল, ঘরে কেউ ঢুকেছে বাবা, দ্রুত আসো। আমি ওপর তলায় গিয়ে দেখি মুখোশধারী এক ব্যক্তি মেয়ের কাছে চাবি চাচ্ছিল। টাকা-পয়সা ও গহনা কোথায় তা জানতে চাচ্ছিল বারবার। তথ্য না দিলে আমার নাতিকে মেরে ফেলবে বলে হুমকি দিচ্ছিল ওই ব্যক্তি। একপর্যায়ে আমি তাকে ধরে ফেলি। এ সময় তার সঙ্গে আমার ধস্তাধস্তি শুরু হয়। তখন হাতুড়ি দিয়ে আমার ঘাড়ে আঘাত করলে মেঝেতে পড়ে অজ্ঞান হয়ে যাই। এরপর কি হয়েছে আমি বলতে পারি না।’

কথাগুলো বলছিলেন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (রমেক) ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের নিউ সার্জারি বিভাগে চিকিৎসাধীন ওমর আলী শেখ। তিনি দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানমের বাবা।

তিনি জানান, মেয়েকে কুপিয়ে গুরুতর জখমের সময় মুখোশ পরা ছিলেন হামলাকারীরা। এ ঘটনার একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী মুক্তিযোদ্ধা ওমর আলী শেখ (৬৫)।

আগের কোনো শত্রুতা বা অন্য কোনো কারণে এ হামলা হয়েছে কি-না জানতে চাইলে মুক্তিযোদ্ধা ওমর আলী শেখ বলেন, মুখোশধারী ব্যক্তি শুধু চাবি আর টাকা-পয়সা কোথায় তা জানতে চেয়েছিল।  মুখোশ পরা ছিল বলে আমি চিনতে পারিনি। পরে শুনেছি আমার মেয়েকে কুপিয়ে জখম করা হয়। কেন এ হামলা হয়েছে তা আমি বলতে পারছি না। তবে বাথরুমের ভেন্টিলেটর ভেঙে বের হয়ে যায় ওই ব্যক্তি। তবে বাইরে কেউ দাঁড়িয়ে ছিল।

র‍্যাব-১৩ এর অধিনায়ক রেজা আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, আমরা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করছি। বিভিন্ন বিষয় মাথায় রেখে ঘটনার তদন্ত করছি আমরা। এ ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করা হবে।

প্রসঙ্গত, বুধবার রাত দুইটার দিকে সরকারি বাসভবনের ভেনটিলেটর ভেঙে প্রবেশ করে ইউএনও ও তার বাবার ওপর হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। তাদের উভয়ের শরীর ও মাথায় আঘাত রয়েছে। ইউএনওর বাবা ওমর আলী শেখ প্রতিদিন সকালে হাঁটাহাঁটি করেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকালে তিনি বাড়ি থেকে হাঁটার জন্য বের না হওয়ায় তার সঙ্গীরা খোঁজ নিতে আসেন। বাড়িতে এসে ডাকাডাকি করে কোনও সাড়া না পেয়ে পুলিশে খবর দেন তারা। পরে পুলিশ এসে ইউএনও ও তার বাবাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। ঘটনার সময় প্রহরীকে একটি ঘরে বেঁধে রাখা হয়েছিল বলে জানা গেছে। বর্তমানে ইউএনওর বাবা ও বাসার প্রহরী রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

এবি/রাতদিন