কান্না থামছে না তুবার, মাকে ‘ফিরিয়ে’ চায় মাহির

বাবা থেকেও নেই। মাকে ‘ছেলেধরা’ বলে পিটিয়ে হত্যা করে পাষণ্ডরা। সেই মায়ের হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে আয়োজিত মানববন্ধনে কাঁদল ছোট্ট দুই শিশু তাসনিম তুবা (৪) ও তার ভাই ১১ বছর বয়সী তাহসিন আল মাহির। এসময় মাহির বলে, ‘আমি কিছু বুঝিনা আমার মাকে ফিরিয়ে দাও।’

শুক্রবার, ২৬ জুলাই জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ও দুপুরে মহাখালীতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সামনে ওই মানববন্ধন হয়। এতে তুবা ও মাহিরের স্বজনরা ছাড়াও বাড্ডার স্থানীয় লোকজন ও সাধারণ মানুষ অংশ নেন।

গত ২০ জুলাই সকালে বাড্ডার একটি স্থানীয় স্কুলে মেয়ে তুবার ভর্তির খোঁজ নিতে যান তাসলিমা বেগম রেনু। ওই সময় কয়েক অভিভাবক তাকে সন্দেহজনকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এক পর্যায়ে রেনুকে ছেলেধরা বলে অপবাদ দিয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। ততক্ষণে গুজব রটে যায় স্কুলে ছেলেধরা নারীকে আটক করা হয়েছে। ওই সময় শত শত মানুষ প্রধান শিক্ষকের কক্ষ থেকে রেনুকে টেনেহিঁচড়ে বের করে পিটিয়ে হত্যা করে।

উচ্চশিক্ষিত রেনু এক সময় স্বামী ও দুই সন্তান নিয়ে বাড্ডা এলাকায় থাকতেন। দুই বছর আগে স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হলে তিনি মহাখালীতে স্বজনের সঙ্গে বসবাস করে আসছিলেন।

আজ সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ‘লাইফ এইড বাংলাদেশ’ ও ঢাকাস্থ রায়পুরাবাসীর ব্যানারে আয়োজিত মানববন্ধনে অংশ নেওয়া লোকজনের সঙ্গে ছিল রেনুর দুই সন্তান তুবা ও মাহির। এক পর্যায়ে সেখানেই মায়ের জন্য কাঁদতে থাকে তারা। তখন কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া লোকজনও আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।

মানববন্ধনে অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগের ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক ও বাফুফের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদ রেনু হত্যাকারীদের উপযুক্ত শাস্তি দাবি করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন নোয়াখালী বিভাগ আন্দোলনের আহ্বায়ক মোহাম্মদ ঈমাম হোসেইন, যুগ্ম আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন শিমুল প্রমুখ।

এদিকে জুমার নামাজের পর মহাখালী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সামনে এলাকাবাসী ও নিহতের স্বজনরা মানববন্ধনে অংশ নিয়ে রেনু হত্যায় অংশ নেওয়া সবাইকে গ্রেপ্তারের দাবি জানান। মানববন্ধনে বলা হয়, রেনু মহাখালী ‘জ’ ব্লকের বাসিন্দা ছিলেন। তিনি ছেলেধরা ছিলেন না। তাকে গুজব ছড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে।

মানববন্ধনে অংশ নেন রেনুর বড় বোন নাজমুন নাহার নাজমা ও ভাগ্নে সৈয়দ নাছির উদ্দিন টিটু। তারা বলেন, এ হত্যা মামলার সুষ্ঠু তদন্ত এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এখন সময়ের দাবি। আসামিদের দ্রুত বিচারের আওতায় এনে বিচার না করলে রেনুর মতো আগামীতে অন্য কেউ এ ধরনের মর্মান্তিক হত্যার শিকার হতে পারেন।

এবি/রাতদিন