কালীগঞ্জে কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ: ৭ ধর্ষকসহ সালিশকারীদের বিরুদ্ধে মামলা

লালমনিরহাটের কালীগঞ্জে ১৭ বছর বয়সী এক কিশোরী দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে। তাকে এক রাতে অন্তত সাতজন ধর্ষণ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় আজ শনিবার, ১০ অক্টোবর দুপুরে কালীগঞ্জ থানায় ওই মেয়েটি বাদি হয়ে মামলা করেছে। মামলায় সাত ধর্ষকসহ ১০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। ওই কিশোরীর বাড়ি পাটগ্রাম উপজেলার বাউরা ইউনিয়নে।

পুলিশ জানিয়েছে, ধর্ষণের শিকার কিশোরীকে চিকিৎসার জন্য লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।  এ ঘটনায় শুক্রবার রাতে রকি নামের একজনকে গ্রেপ্তারের পর তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। সে উপজেলার বাণীনগর এলাকার রজব আলীর ছেলে। গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে বানীনগর এলাকায় ধর্ষণের এ ঘটনা ঘটে।

পুলিশ জানায়, দলবদ্ধ এ ধর্ষণের ঘটনায় সাতজনের নাম উঠে এসেছে। ধর্ষণের শিকার  কিশোরী ও গ্রেপ্তারকৃত রকিও জিজ্ঞাসাবাদে ধর্ষণের সাথে তিনিসহ সরাসরি জড়িত হিসাবে সাতজনের নাম প্রকাশ করেছে। এদিকে মামলায় সালিশকারী হিসাবে বাণীনগর এলাকার রিক্সা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা সোলায়মান আলী, তুষভান্ডার ইউনিয়নের আট নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আজিজুল ইসলাম এবং স্থানীয় একটি অনলাইন পত্রিকার সম্পাদককে আসামি করা হয়েছে। মামলায় সালিশকারী হিসাবে অজ্ঞাত কয়েকজনকেও আসামি করা হয়েছে।

ধর্ষণের শিকার কিশোরী জানায়, মঙ্গলবার বিকেলে ট্রেনে পাটগ্রাম থেকে এসে কালীগঞ্জের কাকিনা রেল স্টেশনে নেমে একটি দোকানে খাওয়ার জন্য ঢোকে সে। সেখানে থাকা রকি কৌশলে তাকে আর ট্রেন ধরতে না দিয়ে ইজিবাইকে গন্তত্যে পৌঁছে দেয়ার কথা বলে সেখান থেকে নিয়ে যায়। এরপর বিভিন্ন জায়গায় ঘুরিয়ে রাতে একটি সেচপাম্পের ঘরে নিয়ে ধর্ষণ করে। এরপর সারারত আরও কয়েকটি জায়গায় একাধিক ব্যক্তি ধর্ষণ শেষে ভোরের দিকে ট্রাকে উঠিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু এতে বাধ সাধে সে। সকালে খোঁজ নিয়ে রকির বাড়িতে বিচার নিয়ে গেলে বাবা-মায়ের সামনে তাকে মারধরও করা হয়। পরে সেখান থেকে স্টেশন এলাকার একটি বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নেয় কিশোরীটি। সেখান থেকে গতকাল শুক্রবার কালীগঞ্জ প্রেসক্লাবে গিয়ে সাংবাদিকদের ঘটনাটি জানায়।

কালীগঞ্জ প্রেসক্লাব থেকে মেয়েটিকে উদ্ধারের কথা জানিয়ে লালমনিরহাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রবিউল ইসলাম বলেন, ‘কাকিনা রেল স্টেশন থেকে মেয়েটিকে প্রলোভন দেখিয়ে অন্যত্র নিয়ে গিয়ে অন্তত সাতজন ধর্ষণ করে। এ ঘটনার পর থেকে মেয়েটি কান্নাকাটি শুরু করলে ওই এলাকায় সালিশ বৈঠক বসে। বৈঠকে অভিযুক্তদের কাছ থেকে আদায় করা জরিমানাও মেয়েটিকে না দিয়ে সেখান থেকে তাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়’।

অনলাইন পত্রিকার সম্পাদককেও মামলার আসামি করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘অনলাইনের ওই সাংবাদিক সালিশ বৈঠক থেকে ঘটনাটিকে পুঁজি করে বেশকিছু টাকা পয়সা নিয়ে মেয়েটিকে বাড়িতে পাঠাতে চাপ সৃষ্টি করেন’।

ওই কিশোরীর মা জানান, পাটগ্রামের কুচলিবাড়িতে বড়বোনের বাড়িতে কয়েকদিন আগে রেখে এসেছিলেন ঘটনার শিকার মেয়েটিকে। এই অবস্থায় আজ তিনি খবর পান যে, তার মেয়ে কালীগঞ্জ থানায় আছে। খবর পেয়ে তিনি থানায় এসেছেন।

কালীগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) ফরহাদ হোসেন মন্ডল জানান, বাণীনগর এলাকার রিক্সা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা সোলায়মান আলীর বাড়িতে স্থানীয় ইউপি সদস্য আজিজুল ইসলামের উদ্যোগে সালিশ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ফলে তারাও এ ঘটনার মামলায় আসামি হয়েছেন।

আরএস/রাতদিন