কালীগঞ্জে মরদেহ নিয়ে মহাসড়ক অবরোধ, কলেজ শিক্ষকের শাস্তি দাবি

লালমনিরহাটের কালীগঞ্জে এক কলেজ শিক্ষককে গ্রেপ্তার ও শাস্তি দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করেছে এলাকাবাসী। কালীগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে এসময় খলিলুর রহমান নামের এক দিনমজুরের মরদেহ রেখে স্থানীয় নারী-পুরুষ বিক্ষোভ করেন।

আজ মঙ্গলবার, ২৭ অক্টোবর সকাল সাড়ে ১০টায় শুরু হওয়া অবরোধ চলে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত। অবরোধ চলাকালে আটকা পড়ে অনেক যানবাহন। পরে সমাজকল্যাণমন্ত্রীর নির্দেশে স্থানীয় প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্¦াস দিলে অবরোধ তুলে নেয় বিক্ষুদ্ধ লোকজন।

নিহত খলিলুর রহমান কালীগঞ্জ উপজেলার কাশিরাম(কমান্ডার পাড়া) গ্রামের প্রয়াত আব্দার রহমানের ছেলে। গত বৃহস্পতিবার এস তাবাস্সুম রায়হান মুস্তাযীর তামান্না ওরফে তামান্না শিরিন নামের ওই কলেজ শিক্ষকের দায়ের করা একটি মামলায় জামিন নিতে আদালতে যাওয়ার সময় সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হন খলিলুর রহমান। পরে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল সোমবার বিকেলে মারা যান তিনি।

জানা গেছে, এস তাবাস্সুম রায়হান মুস্তাযীর তামান্না কালীগঞ্জের উত্তর বাংলা কলেজের অনার্সের (ইংরাজি বিভাগ) প্রভাষক। তিনি উপজেলার কাশিরাম গ্রামের প্রয়াত বজলে রহমান মুসতাযীরের মেয়ে।

অবরোধ-বিক্ষোভকালে ‘খলিলের মৃত্যুর বিচার চাই, মামলাবাজের হাত থেকে বাঁচতে চাই’- শ্লোগান সম্বলিত ফেস্টুন প্রদর্শন করা হয়। খলিলের মৃত্যুর জন্য তামান্না শিরিনকে দায়ি করে বিক্ষোভকারীরা।

অবরোধ চলাকালে বক্তারা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সাজানো ঘটনায় অসংখ্য মানুষকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়েছেন তামান্না। একের পর এক মামলা ও পুলিশী হয়রানীতে অতিষ্ট হয়ে পড়েছেন এলাকাবাসী। বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করার পরেও কোনো প্রতিকার পাননি তারা। মামলা দায়েরের ধারাবাহিকতায় গত ১৬ অক্টোবর খলিলুরসহ ১৪ গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে কালীগঞ্জ থানায় একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করেন তামান্না শিরিন। সেই মামলায় জামিন নেওয়ার তিন দিনের মাথায় আরও একটি মামলা দায়ের করা হলে গত বৃহস্পতিবার জামিন নিতে আদালতে যাওয়ার সময় সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়ে মারা যান খলিলুর।

আজ মঙ্গলবার কালীগঞ্জে খলিলুরের মরদেহ মহাসড়কে রেখে মানববন্ধনসহ বিক্ষোভ করতে থাকেন এলাকাবাসী। এক পর্যায়ে তারা মহাসড়কে বসে নানা ধরণের শ্লোগান ও বক্তব্য দিতে শুরু করেন।

অবরোধের খবর পেয়ে সেখানে উপস্থিত হন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(সদর) আতিকুল ইসলাম, কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার(ইউএনও) রবিউল হাসান, সহকারী কমিশনার(ভ‚মি) জাহাঙ্গীর হোসেন ও কালীগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ফরহাদ মন্ডল। তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণসহ তামান্নার বিরুদ্ধে মামলা নেওয়ার আশ^াসের পরেও উত্তেজিত জনতাকে থামাতে ব্যর্থ হন। পরে সেখানে সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ উপস্থিত হয়ে ইউএনও ও আইনশৃংখলা বাহিনীকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিলে অবরোধ তুলে নেয় আন্দোলনকারীরা।

বিক্ষুদ্ধ লোকজনের উদ্দেশ্যে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(সদর) আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘ লোকজন আর মিথ্যা মামলায় হয়রানীর শিকার হবেন না। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে’।

কালীগঞ্জের ইউএনও রবিউল হাসান বলেন, ‘যে মানুষ লোকজনকে অত্যাচার করছেন তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার পাশাপাশি নিহতের পরিবারকে আর্থিকভাবে সহায়তা করা হবে’।

অভিযোগ প্রসঙ্গে বক্তব্য জানতে মঙ্গলবার বিকেলের দিকে কলেজ শিক্ষক এস তাবাস্সুম রায়হান মুস্তাযীর তামান্নাকে কল দেয়া হলে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

এবি/রাতদিন