কাশ্মীরে নিপীড়নের প্রতিবাদে ভারতীয় শীর্ষ কর্মকর্তার পদত্যাগ

সম্প্রতি ঘটে যাওয়া জম্মু-কাশ্মীরে দমন-নিপীড়নের প্রতিবাদে পদত্যাগ করার ঘোষণা দিয়েছেন ভারতের এক উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা কান্নান গোপীনাথ। কান্নান ইন্ডিয়ান অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিসে (আইএএস) কর্মরত ছিলেন। নিপীড়নের প্রতিবাদে এই প্রথম কোন ভারতীয় কর্মকর্তা পদত্যাগ করলেন বলে জানিয়েছে এনডিটিভি।

গত ৫ আগস্ট ভারতের পার্লামেন্টে ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করে মোদি সরকার। এতে বিশেষ মর্যাদা হারায় ভারতনিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীর। এ অনুচ্ছেদ বহাল রাখতে বিক্ষোভ ফেটে পড়ে কাশ্মীর ও লাদাখজুড়ে।

বিক্ষোভ বানচাল করতে ১৪৪ ধারা জারিসহ ভারতনিয়ন্ত্রিত গোটা কাশ্মীরকে পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয় ভারত প্রশাসন। টেলিফোন, ইন্টারনেট সংযোগসহ যোগাযোগের সব মাধ্যম বন্ধ করে দেয়া হয় কাশ্মীরি জনতার জন্য। এ অবস্থায় এবারের ঈদুল আজহার নামাজ পড়তে পারেননি অনেক কাশ্মীরি।

সম্প্রতি ঘটে যাওয়া এসব ঘটনার প্রতিবাদে পদত্যাগ করার ঘোষণা দিয়েছেন ইন্ডিয়ান অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিসের (আইএএস) কর্মকর্তা কান্নান গোপীনাথ।

নরেন্দ্র মোদি সরকার ভারতীয় সংবিধান থেকে ৩৭০ ধারা তুলে দেয়ার পর এই প্রথম কোনো শীর্ষ কর্মকর্তা পদত্যাগ করে প্রতিবাদ জানালেন।

বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক পদে দায়িত্ব পালন করেছেন কান্নান। বিড়লা ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে বেসরকারী সংস্থায় চাকুরী করতেন তিনি। ২০১২-র সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় ৫৯তম স্থান দখল করে যোগ দেন কেরল সরকারের বিদ্যুৎ ও নগরোন্নয় বিভাগের সচিব হিসাবে যোগ দেন। তিনি সর্বশেষ দাদ্রা নগর হাভেলিতে সচিব হিসাবে কর্মরত ছিলেন। আইএএস অ্যাসোসিয়েশন সূত্র জানিয়েছে, জম্মু-কাশ্মীরের মানুষের মৌলিক অধিকার খর্ব হওয়ায় ক্ষুব্ধ ছিলেন কান্নান।

পদত্যাগের কারণ জানিয়ে টুইটও করেছেন কান্নান।

জম্মু-কাশ্মীর ইস্যু উত্থাপন করে তিনি লেখেন- ‘ভেবেছিলাম সিভিল সার্ভিসে যোগদান করে মানুষের বক্তব্য তুলে ধরতে পারব। মানুষের অধিকার নিয়ে কাজ করব। কথা বলতে পারব। কিন্তু এখন দেখছি আমার কণ্ঠই রুদ্ধ হয়ে যাচ্ছে।’

পদত্যাগের পর ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি লেখেন- ‘আমি স্বরাষ্ট্র সচিব বা অর্থসচিব নই। আমার পদত্যাগে পরিস্থিতির বদল হবে না। কিন্তু আমার বিবেক স্বচ্ছ।’

এদিকে ৩৭০ ধারা বাতিল ও কাশ্মীরে মুসলিম জনগোষ্ঠীর ওপর চলা দমন-পীড়নের প্রতিবাদে কান্নানের পদত্যাগের সিদ্ধান্তে নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন অনেক ভারতীয়। কান্নানকে ‘দেশবিরোধী’ আখ্যায়িত করে টুইটারে সমালোচনা করছেন কেউ কেউ।

অন্যদিকে ইতিবাচক টুইটও জমা পড়ছে অনেক। তাদের মধ্যে অনেকেই কান্নানের পাশে দাঁড়িয়েছেন।

তবে তিনি বলেন, ‘দেশের স্বার্থে আমি দেশবিরোধী তকমা সহ্য করতে রাজি আছি। আমি সবসময় ন্যায়ের পক্ষে। মানুষের মৌলিক অধিকার খর্ব যেখানে হবে, সেখানে আমার অবস্থান বিপরীতই থাকবে।’