কাশ্মীর নিয়ে ভারত-পাকিস্তানের বিরোধ যে কারণে

১৯৪৭ সালে ব্রিটিশদের (ব্রিটেন) থেকে স্বাধীনতা লাভ করে ভারত ও পাকিস্তান। মূলত সেই থেকেই কাশ্মীরকে পেতে মেতে উঠে ভারত-পাকিস্তান। যা নিয়ে বিরোধ এখন অনেকটাই যুদ্ধে রুপ নিয়েছে।

অবশ্য এরআগেও কাশ্মীর নিয়ে ১৯৬৫ এবং ১৯৯৯ সালে দু’বার যুদ্ধে জড়িয়েছিল ভারত-পাকিস্তান। তবে গত ১৪ই ফেব্রুয়ারি ভারত শাসিত কাশ্মিরে আত্মঘাতি হামলায় বহু হতাহতের ঘটনায় উত্তেজনা ফের চরমে উঠেছে।

এরমধ্যে গত সোমবার ভোরে পাকিস্তানের ভিতরে ঢুকে কথিত জঙ্গী আস্তানায় বোমাবর্ষণ করেছে ভারতীয় বিমান। আর ওই বিমান হামলার পর পাকিস্তান সময়মত জবাব দেয়ার ঘোষনা দিয়েছে।

ফলে কাশ্মীর নিয়ে পরমাণু অস্ত্রধারী ভারত ও পাকিস্তান মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে। এতে করে দু‘দেশের সংকট এখন চরমে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

কাশ্মীর নিয়ে বিরোধের কারণ সম্পর্কে বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৪৭ সালে যখন ভারত পাকিস্তান ভাগ করা হয়, তখন পরিকল্পনা অনুযায়ী দুই দেশ থেকেই মুক্ত ছিল কাশ্মীর।

তবে ওইসময় কাশ্মীরের স্থানীয় একজন শাসক বা রাজা ছিলেন। তার নাম হরি সিং । তিনি একটি চুক্তির মাধ্যমে কাশ্মীরকে ভারতের সাথে অন্তর্ভূক্ত করেছিলেন।

কিন্তু ইতিহাসবিদরা বলেন, সেই শর্ত থেকে অনেকটাই সরে এসেছে ভারত। আর পাকিস্তানও অনেকটা জোর করে এই ব্যবস্থায় ঢুকে পড়ায় তখন থেকেই সংকট দেখা দিয়েছে।

যে সংকট সময়ের ব্যবধানে আরও জটিল থেকে জটিলতর হয়ে উঠছে।

এদিকে ৬০ শতাংশের বেশি মুসলিমদের বসবাস ভারত শাসিত জম্মু কাশ্মীরে।

ফলে জম্মু কাশ্মীরের অনেক মানুষ ভারতের শাসনে থাকতে নারাজ। সেকারণে নিজেরা স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বা পাকিস্তানের সংঙ্গে ইউনিয়ন করে যুক্ত হয়ে থাকতে চাইছে তারা।

শুধু তাই নয়, কাশ্মীরে কর্মসংস্থানের অভাব এবং বৈষ্যমের যেমন অভিযোগ রয়েছে। তেমনি সেখানকার বাসিন্দাদের উপর অনেক নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে কাশ্মীরে থাকা ভারতের নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে।

এসব কারণে সেখানে দিন দিন সহিংস হয়ে উঠছে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনও।

অনেকটা ধারাবাহিক এই সহিংসতায় গত বছরেই সাধারণ নাগরিক এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যসহ ৫০০ জনের মতো নিহত হয়েছে।

অপরদিকে ২০০৩ সালে কাশ্মীরে সংঘাত এড়াতে যুদ্ধ বিরতি দিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সম্মত হয়েছিল ভারত এবং পাকিস্তান।

পরে ভারত শাসিত কাশ্মীরে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের অর্থ সহায়তা বন্ধের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিল পাকিস্তান।

২০১৪ সালে ভারতে নতুন সরকার আসার পরেও পাকিস্তানের সাথে শান্তি আলোচনা করার আগ্রহ দেখায় সে সরকার।

এরই আলোকে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ দিল্লী গিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শপথ অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন।

তবে ভারত-পাকিস্তানের এমন সম্পর্ক বেশিদিন দেখা যায়নি। কারণ ২০১৬ সাল থেকে ভারত শাসিত কাশ্মীরে দেশটির সামরিক ঘাঁটিতে বেশ কয়েকটি আক্রমণ হয়েছে।

আর গত ১৪ ই ফেব্রুয়ারি আত্মঘাতি হামলায় ৪০ জনের বেশি ভারতীয় সৈন্য নিহত হয়েছে। ফলে এনিয়ে দুই দেশ আবারও মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে আঘাত-পাল্টা আঘাতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

এমআরডি/রাতদিন