খবরও নেয়নি কেউ! সৈয়দপুরে চরম দূর্দিনে রবিদাস সম্প্রদায়ের মানুষেরা

নীলফামারীর সৈয়দপুরে রবিদাস সম্প্রদায়ের মানুষদের চরম দুর্দিনে চলছে। মহামারী করোনার কারণে কর্মহীন হয়ে এই সম্প্রদায়ের কর্মজীবী পরিবারগুলো। ফলে কর্মহীন এই মানুষগুলো চরম আর্থিক ও খাদ্য সংকটে পড়েছে। অথচ সরকারের ত্রাণ কার্যক্রমের আওতায় আসেননি তারা। এমনকি প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের খোঁজখবরও নেয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার প্রায় দেড় শত রবিদাস (মুচি) পরিবার রয়েছে। বর্তমানে চলমান নভেল করোনা ভাইরাসের প্রাদূর্ভাবজনিত পরিস্থিতিতে পরিবার-পরিজন নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন।

গোটা নীলফামারী জেলা তথা সৈয়দপুর শহরে লকডাউন চলছে এখন। সকল রকম দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শিল্প,কল-কারখানা বন্ধ। অফিস-আদালত,স্কুল-কলেজও ছুটি। রোজগার না থাকায় দিনে একবেলাও ঠিকভাবে খাবার মিলছে না। ফলে রবিদাস সম্প্রদায়ের দিন এনে দিন খাওয়া পরিবারগুলো চরম কষ্টে দিনযাপন করছেন।

এ নিয়ে কথা হয় মানিক দাসের সঙ্গে। তিনি জানান, বংশ পরম্পরায় এই পেশায় আছেন। তাঁর স্ত্রী চম্পা এবং তিন ছেলে কৃষ্ণা (২৪), বৃষ্ণ (১৫), হৃদয়কে (১২) নিয়ে পাঁচ সদস্যের পরিবার। থাকেন সৈয়দপুর শহরের হাতিখানা মহল্লায়। আর নীলফামারীর সৈয়দপুর শহরের বিমানবন্দর সড়কের ট্রাফিক পুলিশ বক্সের পাশে বসে জুতা-স্যান্ডেল সেলাইয়ের কাজ করেন।

আগে রেলওয়ে লাইন ঘেঁষে অস্থায়ী দোকান বসিয়ে সারাদিন কাজ করে ১০০-৩০০ টাকা পর্যন্ত আয় হতো। আর তা দিয়ে কোন রকমে চলে যেত পাঁচ সদস্যের সংসার তাঁর। কিন্তু প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের প্রাদূর্ভাবে তার সবকিছু যেন এলোমেলো করে দিয়েছে। বর্তমানে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন তিনি। প্রতিদিন ঠিকমতো পরিবারের সদস্যদের এক বেলা খাবার জুটছে না।

মানিকের বড় ভাই সুদর্শ দাস ও ছোট ভাই চরণ দাস এ পেশায় জড়িত রয়েছেন। মানিকের মতোই নীলফামারীর সৈয়দপুর পৌরসভা ও ইউনিয়নে রবিদাস সম্প্রদায়ের মানুষগুলোর অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়েছেন।

সৈয়দপুরে রবিদাস (চর্মকার) সম্প্রদায়ের মানুষের জীবনমান উন্নয়নের কাজ করছে বেসরকারি উন্নয়ন গবেষণা সংস্থা রিসার্চ ইনিশিয়েটিভস্, বাংলাদেশ। প্রতিষ্ঠানটির আঞ্চলিক সমন্বয়কারী মো. মতিউর রহমান মতি বলেন, মহামারী করোনার কারণে রবিদাস সম্প্রদায়ের কর্মজীবী পরিবারগুলো চরম আর্থিক ও খাদ্য সংকটে পড়েছে। এমতাবস্থায় সরকারের রেশনকার্ড থেকে শুরু করে সকল নাগরিকসেবায় রবিদাস সম্প্রদায়ের শতভাগ মানুষকে সংযুক্ত করা দরকার।

তিনি ইউএনও অফিসের মাধ্যমে রবিদাস সম্প্রদায়ের লোকজনের অনলাইনভিত্তিক তালিকা এবং অনলাইন স্লিপের ব্যবস্থা করে ত্রাণ বিতরণ ও সার্বিক কার্যক্রম মনিটরের ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার বলে মত প্রকাশ করেন।