খেলতে খেলতে ধসে গেল দেয়াল, প্রাণ গেল শিক্ষার্থীর

ফুল বাগানের দেয়াল ধসে পঞ্চগড়ে নীলা আক্তার নামে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। নীলা দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়তো।

সোমবার, ২৯ জুলাই দুপুরে শহরের ১নং মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে।

নীলার বাবা লিটন পঞ্চগড় চিনিকলের কর্মচারী। মিলগেট এলাকার আনোয়ার হোসেন লিটনের বড় মেয়ে নীলা।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্কুলের শিক্ষার্থীরা জানান, শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক না থাকায় দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী নীলাসহ কয়েক শিক্ষার্থী শ্রেণিকক্ষের বারান্দা সংলগ্ন ফুল বাগানের দেয়ালের পাশে খেলছিল। এ সময় অন্য দুই শিক্ষার্থী ওই দেয়াল লাগোয়া গেটে ঝুলছিল। একপর্যায়ে দেয়ালটি নীলার ওপর ধসে পড়ে।

আশেপাশের লোকজন দেখতে পেয়ে দ্রুত নীলাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যায় সে।

এতে বিক্ষুব্ধ অভিভাবকরা শিক্ষকদেরকে অফিস কক্ষে অবরুদ্ধ করে রাখেন। পরে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

ঘটনার পর পঞ্চগড়-১ আসনের সংসদ সদস্য মো. মজাহারুল হক প্রধান, জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন এবং পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইউসুফ আলীসহ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। সেই সঙ্গে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল মান্নানকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।

সাধারণ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অভিযোগ, দেয়াল ধসে শিশু চাপা পড়লেও কোনো শিক্ষক উদ্ধার করতে বের হননি।

দ্বিতীয় শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নীলাসহ শিশুরা বের হয়ে দেয়ালের পাশে খেলা করছিল। দেয়ালের গেটে আরও দুই শিশু দোল খাচ্ছিল। এ সময় দেয়ালটি ধসে নীলার ওপর চাপা পড়ে। স্কুলের আয়াসহ আমরা তাকে উদ্ধার করি।

ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. মনিরুল ইসলাম মুনির বলেন, আমি ১ এপ্রিল প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করি। দেয়ালটি যে নড়বড়ে ছিল, সেটি বোঝা যায়নি। দুপুর ১২টার দিকে বিদ্যালয় ছুটি এবং সমাবেশের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছিল। এই সময়ের মধ্যে দুর্ঘটনা ঘটে। শিক্ষকরাই শিশুটিকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।

সদর হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক শাহারিয়ার কবীর শিমুল বলেন, ইসিজির মাধ্যমে আমরা মৃত্যু নিশ্চিত করি। প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে, শিশুটির ওপর দেয়াল চাপা পড়েছে এবং মাথায় আঘাত লেগেছিল।

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইউসুফ আলী বলেন, আইনি প্রক্রিয়া শেষে শিশুটির মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ঘটনাটি মর্মান্তিক। শোনার সঙ্গে সঙ্গে আমরা ঘটনাস্থলে ছুটে যাই। ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল মান্নানকে আহ্বায়ক করে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তীতে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

শিশুটির দাফনের জন্য তার পরিবারকে ৫০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।