চিহ্নিত ১৫ বক্তার ওয়াজে কড়াকড়ি আরোপের নির্দেশ

দেশের বিভিন্ন এলাকায় ওয়াজ মাহফিলে বক্তব্য দিতে গিয়ে সাম্প্রদায়িক উসকানিমূলক বক্তব্য, জঙ্গিবাদে উৎসাহ দেয়া, ধর্মের নামে বিভিন্ন উপদল ও তারকাদের নিয়ে কটূক্তি করার অভিযোগে ১৫ জন বক্তাকে চিহ্নিত করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

এসব বক্তাদের বক্তব্য প্রতিরোধে ছয়টি সুপারিশও করা হয়েছে বলে ভয়েস অব আমেরিকার এক খবরে বলা হয়েছে।

জানা গেছে, মার্চের তৃতীয় সপ্তাহে মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক অধিশাখা-২ থেকে তৈরি করা এ প্রতিবেদনে ১৫ জন বক্তার নাম উল্লেখ করে জানানো হয়েছে ‘এই বক্তারা সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মবিদ্বেষ, নারীবিদ্বেষ, জঙ্গিবাদ, গণতন্ত্রবিরোধী ও দেশীয় সংস্কৃতিবিরোধী বয়ান দেন বলে লক্ষ করা যাচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা রেডিক্যালাইজড হয়ে উগ্রবাদের দিকে ধাবিত হচ্ছে।’

এ ছাড়াও ওয়াজ মাহফিল বিষয়ে কয়েকটি সুপারিশ করা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে।

ইতিমধ্যে সুপারিশগুলো ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও সব বিভাগীয় কমিশনারের কাছে চিঠি আকারে পাঠানো হয়েছে।

সুপারিশমালার মধ্যে অন্যতম হলো ওয়াজের বক্তাদের করের আওতায় আনা এবং বক্তারা দেশবিরোধী বক্তব্য দিলে আইনের আওতায় আনা।

ওইসব বক্তার ওয়াজে মঙ্গল শোভাযাত্রাসহ পহেলা বৈশাখ পালন, সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ, নারী সম্পর্কিত বক্তব্য, রাষ্ট্রবিরোধী বক্তব্য যেন না দেয় তা উল্লেখ করা হয়।

তালিকাভুক্ত ১৫ জন বক্তা হলেন, আবদুর রাজ্জাক বিন ইউসূফ (সালাফি), মাওলানা মুফতি মাহমুদুল হাসান(গুনবী), মাওলানা মামুনুল হক (যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস), মুফতি ইলিয়াছুর রহমান জিহাদী (প্রিন্সিপাল, বাইতুল রসূল ক্যাডেট মাদ্রাসা ও এতিমখানা, ক্যান্টনমেন্ট), মুফতি ফয়জুল করিম (জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির, ইসলামী আন্দোলন), মুজাফফর বিন বিন মুহসিন, মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন (যুগ্ম মহাসচিব, ইসলামী ঐক্যজোট), মতিউর রহমান মাদানী, মাওলানা আমীর হামজা, মাওলানা সিফাত হাসান, দেওয়ানবাগী পীর, মাওলানা আরিফ বিল্লাহ, হাফেজ মাওলানা ফয়সাল আহমদ হেলাল, মোহাম্মদ রাক্বিব ইবনে সিরাজ।

বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ঈদগাহ শোলাকিয়ার ঈদ জামাতের ইমাম ও বাংলাদেশ জমিয়াতুল উলামার চেয়ারম্যান মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসুদ ভয়েস অব আমেরিকাকে বলেন, ‘হ্যাঁ এটা ঠিক ওই ১৫ জন মাওলানার ওয়াজে নানা ধরনের উসকানিমূলক কথা থাকে যা সাধারণ মানুষের অনুভূতিকে নাড়া দিতে পারে এবং অমুসলিমদের প্রতি বিদ্বেষমূলক কাজে তারা উদ্বুদ্ধ হতে পারে।’

নিউইয়র্কে বসবাসরত ইন্টারফেইথ নেতা ও মোহাম্মদী সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা ইমাম কাজী কাইয়ুম সংবাদমাধ্যমটিকে বলেন, ‘ওই ১৫ বক্তার বক্তব্যে নানা উসকানি থাকে এবং সরকারের উচিত তাদের সম্পর্কে আরও তদন্ত করা।’

তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এমন পদক্ষেপকে সংবিধান ও গণতন্ত্র পরিপন্থী বলে দাবি করেছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী।

শুক্রবার সন্ধ্যায় গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ওয়াজ মাহফিল ও বক্তাদের নিয়ন্ত্রণের সরকারি চেষ্টা দেশের সংবিধান, গণতন্ত্র, মুসলিম মেজরিটির ধর্মীয় চেতনা এবং মূল্যবোধবিরোধী। যদি কোনো বক্তার আলোচনায় সরকার বিব্রত হন, তবে সরকার তাকে সতর্ক করতে পারেন এবং বয়ানের ব্যাখ্যা তলব করতে পারেন। তা না করে পুরো ওয়াজের মাঠকে দোষারোপ করা গভীর ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত বহন করছে।

এবি/রাতদিন