জমানো ৫শ-হাজার টাকার নোট বাতিল হবে?

অবৈধ আয় অপ্রদর্শিত রাখতে অনেকেই বাসা-বাড়ি, অফিসে তা সংরক্ষণ করেন। সঞ্চিত এসব অর্থের বেশির ভাগ ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট।  বিপুল পরিমাণ অর্থ এভাবে ঘরে রাখায় ২০১৬ সালে ভারতের নরেন্দ্র মোদি সরকার ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিল করে। বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশে এভাবে বাতিল করলে অনেকে বিপাকে পড়বেন। তাই কোনো কোনো মহল থেকে প্রস্তাব উঠেছে বাংলাদেশে বর্তমানে প্রচলিত ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিল করে নতুন টাকা ছাপানো উচিত। বাংলাদেশ প্রতিদিনের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ।

পত্রিকাটি জানায়, প্রস্তাব উঠেছে- কারো কাছে এমন টাকা থাকলে সরকারি আইন ও নিয়মনীতি মেনে তা ব্যাংকে জমা দিয়ে নতুন টাকা নেবে। এতে সরকারের আয় যেমন বাড়বে, তেমনি দেশে বিনিয়োগও বাড়বে।

সম্প্রতি দেশে ক্যাসিনো, জুয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেকের বাসা, অফিসে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থ উদ্ধার করেছে প্রশাসন। আটক করা হয়েছে একাধিক ব্যক্তিকে। উদ্ধার হওয়া কোটি কোটি টাকার কোনো আয়ের উৎস বলতে পারছে না আটককৃতরা। কালোবাজারি, মাদক, জুয়া, ঘুষ, দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত হয়েছে এসব জমানো অর্থ। অবৈধভাবে আয়ের সব টাকাই বাসা-বাড়িতে জমিয়ে রাখছেন সংশ্লিষ্টরা।

অভিযানে দেখা গেছে, উদ্ধার হওয়া অর্থের মধ্যে বেশির ভাগ ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট। জমাতে সুবিধা হওয়ায় তারা এ দুটি নোট পছন্দ করছেন। ফলে ব্যাংক থেকে বের হওয়ার পর বাড়ির সিন্দুকে আটকে যাচ্ছে সব টাকা।

ভারত সরকার দেশের এ অবৈধ জমানো টাকা মূলস্রোতে বা বিনিয়োগে নিয়ে আসতে ২০১৬ সালের নভেম্বরে ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিল করে। ভারতে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে লেনদেন অনেকাংশে দুই বড়মানের নোটের মাধ্যমে সম্পাদিত হয়ে থাকে। সব বড় নোট বাতিল করার ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যের লেনদেনের ক্ষেত্রে বড় সফলতা পেয়েছে দেশটি। এক্ষেত্রে ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে লেনদেনের বিস্তৃতি বেড়েছে। আর এতে আয়ের ওপর আরোপনীয় কর বিশেষ করে আয়কর ও মূল্যসংযোজন কর পরিশোধে বাধ্য হচ্ছে লেনদেনকারীরা।

ভারত সরকার বড় নোট বাতিল করার পর এসব দুর্নীতিবাজের অবৈধ সঞ্চয় আহরণ ও রক্ষাকরণের সুযোগ সীমিত হয়ে গেছে। বাংলাদেশে এসব নোট বাতিল করা হলে একই সুবিধা পাবে সরকার। অবশ্য এর আগে ১৯৭২ সালের মার্চ মাসে স্বাধীন বাংলাদেশ পাকিস্তান সরকার কর্তৃক প্রচলিত ৫০ টাকার নোট বাতিল ঘোষণা করে। এ নোট সংশ্লিষ্ট ব্যাংক বা নিকটস্থ ডাকঘরে জমা দিয়ে নতুনভাবে মুদ্রিত নোট নেওয়ার জন্য তিন দিন সময় দেওয়া হয়েছিল।

১৯৭৫ সালের এপ্রিল মাসে বাংলাদেশ সরকার পাকিস্তান আমলে প্রচলিত ১০০ টাকার নোট বাতিল করে। ১০০ টাকার নোট যাতে দেশের অর্থ ব্যবস্থায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না করতে পারে এবং পাকিস্তান প্রত্যাগতরা বা পাকিস্তানপন্থিরা বাংলাদেশের সম্পদ পাকিস্তানে পাচার না করতে পারে সে জন্য এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। এতে বাংলাদেশ সরকার সফলতা পেয়েছিল।

অন্যদিকে চলতি বছরে বাজেট ঘোষণায় বলা হয়, বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্কে শিল্প স্থাপনে অপ্রদর্শিত আয় থেকে বিনিয়োগ করা অর্থের ওপর ১০ শতাংশ হারে কর দিলে ওই অর্থের উৎস সম্পর্কে আয়কর বিভাগ থেকে কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করা হবে না।

এ প্রসঙ্গে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যানে ড. আবদুল মজিদ বলেন, ‘অবৈধভাবে যারা উপার্জন করেছে তাদের সব টাকা ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট হয়ে বাসা-বাড়িতে স্তূপ করেছে, সিন্দুকে রেখেছে। এসব অর্থ বিনিয়োগে আনতে এসব বড় নোট বাতিল করা হবে দেশের অর্থনীতির একটি বড় অর্জন।’

নির্দিষ্ট সময় দিয়ে ঝটিকা ঘোষণার মাধ্যমে এসব নোট বাতিল করার সময় এসেছে বলেও মনে করেন তিনি।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. মির্জ্জা এ বি আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘সাধারণ মানুষ যাতে ভোগান্তির শিকার না হয় এমন পদ্ধতি মেনে বড় নোট বাতিল করা যায়। তবে এভাবে যাদের কাছে অর্থ সঞ্চিত আছে, তা বিনিয়োগে নিয়ে আসতে হবে। তাদেরকে খুঁজে বের করতে হবে।’

জেএম/রাতদিন