জলঢাকার এক অদম্য জগত, আঁধার কাটিয়ে আলোয় ফেরার গল্প

আমি জানিনা আজ রেজাল্ট হয়েছে। বাবার সাথে অন্যের জমিতে দিন মজুরের কাজ করতে গিয়ে দুপুরে হেড স্যারের ফোনে জানতে পারলাম আমি এ প্লাস পেয়েছি। আমার তো পড়ালেখা বন্ধ হয়েই গিয়েছিল। তারপর আমাদের হেড স্যার আমার বাবাকে ডেকে স্কুল হতে আমার পড়ালেখার যাবতীয় দায়িত্বের ভার নেন। এরপর আমি আবারো স্কুলমুখী হই। যার ফসল আজকের এসএসসি’র রেজাল্ট।

কথাগুলো বলছিল নীলফামারীর জলঢাকা আলহাজ্ব মোবারক হোসেন অনির্বান বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয়ের এ প্লাস পাওয়া শিক্ষার্থী জগত চন্দ্র রায়।

রোববার, ৩১ মে এই ফলাফল প্রকাশিত হয়।

জগত চন্দ্রের বাবা চাটি বর্মন উপস্থিত সংবাদকর্মীদের নিকট বলেন, অভাবের কারণে আমি কখনও স্কুলের মুখ দেখি নাই। আমার দুই ছেলে সন্তান। বড় ছেলে রতন চন্দ্র তারও পড়ালেখা করার সুযোগ হয় নাই। যদি স্কুলের হেড মাষ্টার রোকন চৌধুরী স্যার ছেলেটির দায়িত্ব না নিতেন তাহলে অনেক আগেই তার লেখাপড়ার আশা শেষ হয়ে যেত। বাড়ী থেকে আসার পথে জগতকে বলেছিলাম আমার তো সাধ্য নাই যদি কখনও তোর কেউ পড়ালেখার দায়িত্ব নেয় তাহলে তুই ভবিষ্যতে কি হতে চাস রে বাবা ? সে আমাকে বলেছে ডাক্তার হবে।

এসময় জগত চন্দ্রের মা রতনা রানী বলেন, পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পড়েছি। তারপর আমার আর পড়া হয়নি অভাবের কারণে। আমরা গরীব মানুষ শুধু মাএ ছয় শতকের ভিটা আছে। তার উপরেই আমরা বসবাস করি। আমার সন্তানের পাশে যদি কেউ না দাড়ায় তাহলে এই পড়া তার তার শেষ পড়া হবে। তাই ছেলেটা যেন তার ডাক্তার হবার স্বপ্ন পূরণ করতে পারে এজন্য সবার সহযোগিতা চাই।

আলহাজ্ব মোবারক হোসেন অনির্বান বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক শাহ মোঃ রোকনুজ্জামান রোকন চৌধুরী বলেন, দিনাজপুর শিক্ষা বোডের অধীন এই প্রতিষ্ঠান হতে ১১২জন এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। ৮২জন পাশ করেছে। পাশের হার ৭৫%। প্রতিষ্ঠানটিতে যেসব শিক্ষার্থী আছে,তারা অধিকাংশই গরীব ঘরের। আর জগত চন্দ্র এমন গরীব ঘরের যে কিনা বাবা-মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট এলাকায় পরীক্ষা শেষে দিন মজুরের কাজ করতে গিয়েছিল। আজও তাকে যখন রেজাল্টের কথা অন্যের মোবাইল ফোনে জানাই তখনও সে দিনমজুর হিসেবে মানুষের ধান কাটছে। এমন মেধাবীদের পাশে থাকা,সহযোগিতা করা সবার নৈতিক দায়িত্ব বলে আমি মনে করি।

প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা কমিটির সভাপতি আলহাজ্ব আমজাদ হোসেন চৌধুরী বলেন, বিজ্ঞান বিভাগ হতে এবার এসএসসি ফলাফলে জগত চন্দ্র নামে ছেলেটি এপ্লাস পেয়েছে। সে তার স্বপ্ন পূরণে যেন এগিয়ে যেতে পারে। দেশের সেবা করতে পারে। সেজন্য ছেলেটি পাশে এগিয়ে আসতে সবার আন্তরিকতা ও সহযোগিতা কামনা করছি।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা চঞ্চল কুমার ভৌমিক বলেন, তার স্বপ্ন পূরণে আমাদের ঘাটতি থাকবেনা। পাশাপাশি সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসতে আহবান করছি।