‘ডিজিটাল বর্ষবরণ’ সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের

মহামারি করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে ভিন্নভাবে বর্ষবরণ করা হয়েছে। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ডিজিটাল পদ্ধতিতে এই ‘বর্ষবরণ’ অনুষ্ঠান এসো হে বৈশাখ ১৪২৭ উদযাপিত করে।

মঙ্গলবার, ১৪ এপ্রিল সকাল সাড়ে আটটা থেকে দেশের সব টেলিভিশন চ্যানেলে একযোগে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান সম্প্রচারিত হচ্ছে।

সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাণী দিয়ে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের ‘বর্ষবরণ’ অনুষ্ঠান শুরু হয়।

জাতিকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ঘরে বসেই এবারের নববর্ষের আনন্দ উপভোগ করবো। কবিগুরুর কালজয়ী গান ‘এসো হে বৈশাখ, এসো এসো/ মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা/ অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা’ গেয়ে আহ্বান করবো নতুন বছরকে। অতীতের সব জঞ্জাল-গ্লানি ধুয়ে-মুছে আমরা সামনে দৃপ্ত-পায়ে এগিয়ে যাবো, গড়বো আলোকোজ্জ্বল ভবিষ্যত।

করোনা ভাইরাসের যে গভীর আঁধার আমাদের বিশ্বকে গ্রাস করেছে, সে আঁধার ভেদ করে বেরিয়ে আসতে হবে নতুন দিনের সূর্যালোকে। কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের ভাষায় তাই বলতে চাই:

মেঘ দেখ কেউ করিসনে ভয়

আড়ালে তার সূর্য হাসে,

হারা শশীর হারা হাসি

অন্ধকারেই ফিরে আসে।

প্রধানমন্ত্রীর সেই অভয় বাণীর মধ্য দিয়েই আজ ঘরে ঘরে উদযাপন হচ্ছে পহেলা বৈশাখ।

এর আগে সোমবার সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী এবার ডিজিটাল পদ্ধতিতে পহেলা বৈশাখ উদযাপন করা হবে।

কৃষিকাজ ও খাজনা আদায়ের সুবিধার জন্য বাংলা সন গণনার শুরু মোঘল সম্রাট আকবরের সময়ে। হিজরি চান্দ্রসন ও বাংলা সৌর সনের ওপর ভিত্তি করে প্রবর্তিত হয় নতুন এই বাংলা সন।

১৫৫৬ সালে কার্যকর হওয়া বাংলা সন প্রথমদিকে পরিচিত ছিল ফসলি সন নামে, পরে তা পরিচিত হয় বঙ্গাব্দ নামে। কৃষিভিত্তিক গ্রামীণ সমাজের সঙ্গে বাংলাবর্ষের ইতিহাস জড়িয়ে থাকলেও এর সঙ্গে রাজনৈতিক ইতিহাসেরও সংযোগ ঘটেছে।

পাকিস্তান শাসনামলে বাঙালি জাতীয়তাবাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয় বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের। আর ষাটের দশকের শেষে তা বিশেষ মাত্রা পায় রমনা বটমূলে ছায়ানটের আয়োজনের মাধ্যমে।

দেশ স্বাধীনের পর বাঙালির অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রতীকে পরিণত হয় বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। উৎসবের পাশাপাশি স্বৈরাচার-অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদও এসেছে পহেলা বৈশাখের আয়োজনে।

১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে বের হয় প্রথম মঙ্গল শোভাযাত্রা। ইউনেস্কো এ শোভাযাত্রাকে বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মর্যাদা দেয় ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর ।