‘এক অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল আমাদের যা কখনো পূরণ হবে না। রাজনীতি অনেকেই করেন, কিন্তু এদেশের রাজনীতিতে ভালো মানুষের সংখ্যা হাতে গোনা। তাদের মধ্যেই ছিলেন একজন সৈয়দ আশরাফ’
২১ বেইলি রোড, ঢাকা। বাসার ভেতর-বাইরে অসংখ্য মানুষের ঢল। যে ঢল এসে ঠেকেছে রাজপথে, যতদূর চোখ যায়। পরিবার-স্বজন, নেতাকর্মী, ভক্ত- কে নেই? তাদের চোখে-মুখে বিষন্নতা। সবাই এসেছেন সহকর্মী বা প্রিয় মানুষটাকে এক নজর দেখতে।
এই মানুষটা আর কেউ নন, ১৯৭১ সালে যিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। দেশের মানুষের কাছে যিনি পরিচ্ছন্ন রাজনীতির উদাহরণ হয়ে উঠেছিলেন। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, পরপর পাঁচবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।
তাঁর কফিনবন্দি নিথর দেহ ওই বাড়িতে আসছে শেষবারের মতো। তাইতো মানুষের এই ভিড়।
শোকার্ত মানুষের অপেক্ষার পালা শেষ হয়। শনিবার, ৫ জানুয়ারি সন্ধ্যা সাতটার দিকে বাড়িতে ‘ফেরেন’ নেতা। মরদেহবাহি গাড়িতে চড়ে। কান্নার রোল পড়ে যায় চারদিকে। সাথে কফিনে একের পর এক উঠতে থাকে ফুলেল শ্রদ্ধা। এই কান্নায় যেন ভারি হতে থাকে চারপাশের পরিবেশ। উৎসুক আগন্তুক থেকে শুরু করে নবীন-প্রবীণ নেতা, সকলের চোখেই তখন নোনা জল। স্বজনের কান্নার আওয়াজ যেন ছাপিয়ে যায় সেই জল।
এর আগে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বিশেষ বিমানটি সন্ধ্যায় রানওয়ে স্পর্শ করার আগে থেকে সেখানেও ছিল মানুষের ভিড়। ছিলেন তাঁর দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহকর্মী, আত্মীয় স্বজনসহ সর্বস্তরের মানুষ।
এক সময় বিমান অবতরণ করে। জাতীয় পতাকায় মোড়ানো কফিন নামানো হয়। সাথে সাথে সেখানেও উপস্থিত সবার চোখ ছলছল করে। অনেকে ডুঁকরে কেঁদে ওঠেন। অশ্রুসিক্ত শ্রদ্ধা জানান আওয়ামীলীগ নেতারা।
ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু ও তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, মোহাম্মদ নাসিম ও ড. আব্দুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক মেজবাহ উদ্দিন সিরাজ ও এনামুল হক শামীম, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, উপ-দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়াসহ অনেকেই। এসময় প্রায় সকলেই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন, কেঁদে ফেলেন কেউ কেউ।
সেখানে মোনাজাত শেষে অশ্রুশিক্ত ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, ‘এক অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল আমাদের যা কখনো পূরণ হবে না। রাজনীতি অনেকেই করেন, কিন্তু এদেশের রাজনীতিতে ভালো মানুষের সংখ্যা হাতে গোনা। তাদের মধ্যেই ছিলেন একজন সৈয়দ আশরাফ’।
এদিকে শনিবার সকাল থেকেই প্রয়াত সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের সরকারি বাসভবনে খোলা হয় শোক বই। দিনভর সেখানে অনেকেই স্বাক্ষর করেন। লেখেন বরেণ্য এই রাজনীতিবিদকে নিয়ে। সেখানেও মানুষের চোখের কোনে ছিল কান্না।
সূত্র : বিভিন্ন গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।
এইচএ/০৬.০১.১৯