তিস্তার তান্ডবে তছনছ দহগ্রাম, ডুবেছে ফসল, ভেসে গেছে গবাদী পশু

গত কয়েক দিনের ভারি বর্ষণসহ উজান থেকে নেমে আসা ঢলে তিস্তা নদীর পানি অস্বাভাবিক হারে পানি বৃদ্ধি পায়। এর ফলে লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলার আলোচিত দহগ্রাম ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ধেয়ে আসা প্রবল পানির তোড়ে দহগ্রাম-আঙ্গরপোতার নদীতীরবর্তি কয়েকটি এলাকা পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে।

মঙ্গলবার ,১৯ অক্টোবর রাতে হঠাৎ করে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে থাকে। পরদিন বুধবার বিকেল পর্যন্ত একদিকে পানি বেড়েছে, অন্যদিকে বেড়েছে ধ্বংসযজ্ঞ। তিস্তার এই তান্ডবে ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা যেন বিভীষিকাময় এক জনপদে রুপ নেয়।

ভারত থেকে উৎপত্তি হওয়া তিস্তা নদী এ ইউনিয়ন দিয়েই দেশে প্রবেশ করেছে। ফলে তিস্তার পানির প্রথম ধাক্কা সহ্য করতে হয় দহগ্রামকে।

এবারের এই তান্ডবে হাজারো পরিবার পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। তলিয়ে গেছে প্রায় দুই হাজার একর জমির রোপা আমন, চা- বাগান, ভূট্টাসহ বিভিন্ন ফসল। প্রায় সাড়ে তিনশত বাড়ি – ঘর ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। পাঁচটি  সেতুসহ  ৮ টি রাস্তা পানির তোড়ে ভেঙ্গে গেছে । বঙ্গের বাড়ি এলাকায় বিদ্যুতের খুটি উপড়ে পড়েছে। বিচ্ছিন্ন রয়েছে বিদ্যূৎ সরবরাহ।

দহগ্রাম ইউনিয়নের  ৯ নং ওয়ার্ডের কাতিপাড়া এলাকার বাসিন্দা মোছা. আছমিরা বেগম (৪৫) ও মনি বেগম (৩২) বলেন, কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে বন্যার পানি ঘরে উঠেছে। দুই দিন থেকে রান্না করতে পারছিনা। বাহির থেকে খাবার এনে খেতে হচ্ছে।

একই গ্রামের বাসিন্দা আজিজুল হোসেন বলেন (৬৫) বলেন, বন্যার পনিতে ৫ বিঘা জমির ধান ও ২ বিঘা জমির ভুট্টা পানিতে তলিয়ে গেছে।  শিশু আর গরু, ছাগল নিয়ে বন্যায় খুব সমস্যায় পড়েছি। হাস – মুরগি পানিতে ভেসে গেছে।

দহগ্রাম ইউনিয়নের  ৯ নং ইউপি ওয়ার্ডের সদস্য হাবিবুর রহমান হবি জানান, বন্যায়  দহগ্রামে  রাস্তা-ঘাট, সেতু ও বাড়িঘর, ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কাতিপাড়া এলাকায় কাবিখা প্রকল্পের আওতায় নির্মিত ২ কিলোমিটার রাস্তা ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় লোকজন যাতায়াত করতে পারছে না।

বন্যাকবলিত এলাকায় শুকনো খাবার বিতরণ করেন দহগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল হোসেন প্রধান, দহগ্রাম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান ও দহগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য হাবিবুর রহমান হবি।

ইউপি সদস্য হাবিবুর রহমান হবি বলছিলেন, ‘আমার ওয়ার্ডের প্রায় দেড় হাজার মানুষকে শুকনো খাবার দেয়া হয়েছে। তবে আরও সহায়তা দরকার।

দহগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল হোসেন প্রধান বলছিলেন, ‘আমার বয়সে এ রকম বন্যা দেখিনি।’

পানিবন্দি মানুষদের মাঝে  শুকনো খাবার বিতরণ অব্যাহত রয়েছে বলে জানান ওই ইউপি চেয়ারম্যান।

জেএম/রাতদিন