তিস্তা ব্যারাজ কর্তৃপক্ষ মানেনি সচিবের নির্দেশনা, ভারী যান চলছেই

দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ। এর উপর দিয়ে সাধারণত ভারী যানবাহন চলাচলের কথা না থাকলেও চলছে ভারী যানবাহন। চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় সেটিকে যানচলাচলের অনুমতি দিয়ে ইজারা পদ্ধতি চালু করে। ফলে তখন থেকেই দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার (কেপিআই) একটি তিস্তা ব্যারাজ দিয়ে চলছে ভারী যানবাহন। সর্বশেষ পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিবের নির্দেশনাও উপেক্ষা করেছে তিস্তা ব্যারাজ কর্তৃপক্ষ।

ইজারা দেওয়ার পর ব্যারাজের উপর দিয়ে আমদানী-রপ্তানী পণ্যবাহী ট্রাকসহ ভারী যানবাহন চলাচল শুরু হয়। ফলে এক সময় ফাটল দেখা দিতে শুরু করে সেখানে। তবে কর্তৃপক্ষ বারবার জোড়াতালি দিয়ে ফাটল মেরামত করে ইজারাপ্রথা অব্যাহত রাখে।

তবে বিষয়টি বারবার গণমাধ্যমে উঠে আসায় নড়েচড়ে বসে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়। শেষ পর্যন্ত ২০১৪ সালের ২৫ নভেম্বর থেকে সকল প্রকার ভারী যানবাহন ব্যারাজ দিয়ে চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। এর পরপরই বাতিল করা হয় ইজারাপ্রথা। সেসময় বলা হয়, ব্যারাজের উপর দিয়ে শুধুমাত্র কার ও মাইক্রোবাসের মতো হালকা যান বিনা মাশুলে চলাচল করতে পারবে। ওই নির্দেশনা জারির পর, ব্যারাজের দুই পাশে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হলেও এর নীচ দিয়ে এখনো ট্রাক চলাচল অব্যাহত আছে।

সর্বশেষ গত ১৩ জুলাই তিস্তা ব্যারাজ পরিদর্শনে এসে এর উপর দিয়ে ট্রাক চলাচল বন্ধের নির্দেশ দেন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব কবির বিন আনোয়ার। ওই দিন সাংবাদিকদের সামনে ব্যারাজ কর্তৃপক্ষকে তিনি নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘আগামীকাল থেকেই যেন ব্যারাজের ওপর দিয়ে ট্রাক চলাচল বন্ধ করা হয়। আপাতত বাঁশ দিয়ে বন্ধ করতে হবে, কেউ সেটা ভাঙলে তাকে লাঠিপেটা করো।’ তিনি আরও বলেন, ‘এখানাকার পুলিশ-আনসাররা কী করে। কয়েকদিন মোবাইলকোর্ট করো, এরপর মামলা দেও।’

জানা গেছে, সচিবের নির্দেশের পরের দিনেই আগে থেকে সেখানে স্থাপন করা ফটক আকৃতির প্রতিবন্ধকতার নিচে রড লাগিয়ে এর উচ্চতা কিছুটা কমিয়ে দেয় ব্যারাজ কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এরপরও সেখান দিয়ে অনায়াসে চলছে ভারী যান বিশেষ করে পাথরবোঝাই ট্রাক। এতে একদিকে স্পর্শকাতর স্থাপনটি যেমন দিন দিন পড়ছে হুমকির মুখে, অন্যদিকে এর নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, সচিবের নির্দেশনার পর আগে তৈরি ফটক আকৃতির প্রতিবন্ধকতার নীচ দিয়ে লোহার রড লাগিয়েছে কর্তৃপক্ষ। যার মাটি থেকে উচ্চতা আট ফুটের উপরে। ফলে সচিবের কড়া নির্দেশের পরেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। সেখান দিয়ে পেরিয়ে ব্যারাজ পারাপার করছে নানা ধরণের ভারী ট্রাক। অভিযোগ পাওয়া দেছে, ব্যারাজ কর্তৃপক্ষ ও ট্রাক মালিকরা যোগসাজশে কৌশলে সেখানে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে ট্রাক চলাচলের পথ রেখেছেন।

ট্রাক চালকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তাদের অনেকই ট্রাকের বডির উচ্চতা কিছুটা কমিয়ে ব্যারাজের উপর দিয়ে চলাচল করছেন। এগুলোর বেশিরভাগেই পাথর পরিবহনে নিয়োজিত। আর পাথরসহ প্রতিটি ট্রাকের ওজন দাড়ায় ১৮ থেকে ২৪ টন পর্যন্ত।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রবিউল ইসলাম দাবি করেন, ‘ব্যারাজের উপর দিয়ে ভারী যান চলাচল করছে না।’ তিনি বলেন, ‘আনুভূমিকভাবে আট ফুট উচ্চতার ট্রাক চলাচলে কোনো বাধা নেই।’ পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিবের ট্রাক বন্ধের নির্দেশনার প্রসংগ তুললে তিনি এর সদোত্তর দিতে পারেননি।

এইচএ/রাতদিন