থমকে গেছে শহর, থেমেছে রিকশার চাকা, শুধু থামে না ক্ষুধার জ্বালা

বাবলু মিয়া। পেশায় একজন রিক্সা চালক। রংপুর মহানগরীর ১২ নং ওয়ার্ডের নজিরের হাট রাধাকৃষ্ণপুর এলাকার বাসিন্দা। ছেলে মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। তারা আলাদা থাকেন। আর বাবলু মিয়ার সংসার চলে রিকসার প্যাডেলে।

করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে সারাদেশের ন্যায় রংপুরেও বন্ধ রয়েছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ হোটেল রেস্তোরাঁ। ছয়দিন ধরে শহরে লোক নেই বললেই চলে। থেমে যাওয়া শহরের মতোই থেমে গেছে বাবলুর রিকশার চাকা। আর সেইসাথে জীবন চাকাও থেমে যাবার উপক্রম হয়েছে।

কথা হলো বায়ান্ন বছর বয়সী বাবলু মিয়ার সাথে। তিনি বলছিলেন, খালি কি আর রিক্সাখান নিয়া বাইর হইছোও। পেটের দায়ে বেড়া লাগোছে। পেটের টানে বাইরত রিক্সা নিয়া ঘুড়ি বেড়াইছে। রিক্সা নিয়া না বের হইলে হামাক কায়ো কি খাবার দিয়া আসবে। সকাল থাকি এখন দুপুর প্রর্যন্ত খালি ৮০ টাকা ভারা মারছোং।’

তিনি আরোও বলেন, প্রতিদিনেই রিক্সা নিয়ে বের হই। রিক্সার মাহাজনোক আগে দিতে হতো ২শ’ ৫০টাকা আর এই ৬ দিন থেকে দিতে হয় একশত টাকা করে। এই ছয়দিন থেকে শহরে লোক নাই ভারাও না সেরকম। কোন রকম ১৮০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা ভারা মারি এ দিয়ে কি হামার সংসার চলে।

আগে প্রতিদিন রিক্সা চালিয়ে যা অর্থ আসতো তা দিয়ে চাল, ডাল কিনে বাড়ি ফিরতেন। গত ছয়দিন থেকে কোনো ভাড়া না পেয়ে এভাবেই খালি রিক্সা নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন বাবলু মিয়া।
এই মহামারী করোনা ভাইরাসের সংক্রোমণ রোধে সবকিছু বন্ধ হওয়ায় পরিবারটি এখন খুব কষ্টে জীবন যাপন কাটাচ্ছেন।

এরকম শয়ে শয়ে বাবলু মিয়া খালি রিকশা নিয়ে ঘুরছেন শহরের প্রতিটি রাস্তায়। জনশূন্য শহরে সারাদিন ঘুরে ঘুরেও মিলছে না একবেলার অন্ন।

উদাস দৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাঁকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন বাবলু মিয়া। হয়তো এই দীর্ঘশ্বাস পৌছে যাবে উপরে যিনি থাকেন তার কাছে। মহাদূর্যোগের এই দিনে তিনিই তো একমাত্র ভরসা।

জেএম/রাতদিন