দুদকের নির্দেশে জালিয়াতিতে অধ্যক্ষ নিয়োগের তদন্ত শুরু

লালমনিরহাটের মহিষখোচা উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজে জালিয়াতির মাধ্যমে অধ্যক্ষ নিয়োগের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নির্দেশে তদন্ত শুরু করে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস। বুধবার (২৭ জানুয়ারি) দুপুরে আদিতমারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যালয়ে সাক্ষীদের সাক্ষ্য নেওয়া হয়।

বুধবার (২৭ জানুয়ারি) আদিতমারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নিজ দপ্তরে অভিযোগের সপক্ষে একাধিক ব্যক্তির সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। এর আগে স্থানীয় ও ভুক্তভোগীরা পরিচয় গোপনের শর্তে দুর্নীতি দমন কমিশনে একাধিক লিখিত অভিযোগ করেন শরওয়ারের নিয়োগের নামে অর্থবাণিজ্য ও স্বেচ্ছারীর অভিযোগ তুলে।

বিভিন্ন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ৭ জানুয়ারি দুককের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক মাসুদুর রহমান স্বাক্ষরিত (০০.০১.০০০০.১০৯.৩৮.০০১.২০-৩৩ নম্বর স্মারক) একটি পত্র পাঠিয়ে লালমনিরহাট জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে তদন্তের নির্দেশ দেন। আগামী ৭ ফেব্রুয়ারির মধ্যে তদন্ত করে ই-মেইলে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়।

অভিযোগ থেকে জানা যায়, ১৯৯৭ সালের ১৮ অক্টোবর আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ে প্রভাষক পদে যোগ দেন শরওয়ার আলম। ২০০১ সালে এপ্রিল মাসে তিনি এমপিওভুক্ত হন। তার ইনডেক্স নম্বর ৬১৮৪০৮। এরপর তিনি সনদ জালিয়াতি করে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে উচ্চতর বেতন গ্রহণ করেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

২০১১ সালের ৫ জুন কলেজ শাখার প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ শহিদুর রহমান অবসরে গেলে শরওয়ার আলম প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব নেন। তখন প্রতিষ্ঠানটির গঠিত পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করা হলে নিম্ন আদালত ও হাইকোর্ট পর্ষদের কার্যক্রম স্থগিতাদেশ দেন।

পরে আদালতের নির্দেশ অমান্য করে ওই পরিচালনা পর্ষদের স্বাক্ষরে আগের পদে ইস্তফা না দিয়ে জালজালিয়াতির মাধ্যমে একাধিক পরীক্ষায় তৃতীয় বিভাগের শরওয়ার আলম গোপনে ২০১২ সালের ২১ জানুয়ারি অধ্যক্ষ হিসেবে যোগ দেন। অধ্যক্ষ হিসেবে ২০১২ সালের ২১ জানুয়ারি যোগদান দেখালেও একই সালের আগস্ট মাস পর্যন্ত আগের পদের বেতন-ভাতা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন। বিরতিহীনভাবে সহকারী অধ্যাপক থেকে অধ্যক্ষ পদে বেতন-ভাতা গ্রহণ করেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।

দুদকের প্রধান কার্যালয়ের পত্রের নির্দেশনা মোতাবেক সনদ জালজালিয়াতির মাধ্যমে অধ্যক্ষ নিয়োগের বিষয়টি জেলা শিক্ষা অফিস তদন্ত করছে। অধ্যক্ষ শরওয়ার আলমের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ এসেছে। তাই তার অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়টি সংশ্লিষ্ট উপজেলা শিক্ষা অফিসকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। যথাসময়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।
আবুল কালাম আজাদ, জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা

১২ বছরের এমপিওভুক্তির অভিজ্ঞতা থাকা আবশ্যক অধ্যক্ষ পদে। কিন্তু তার অভিজ্ঞতা ১১ বছরের নিচে। এ ছাড়া পরিপত্র অনুযায়ী অধ্যক্ষ পদে কোনোভাবেই তৃতীয় বিভাগ গ্রহণযোগ্য নয়। কিন্তু শরওয়ার আলম এসএসসি ও স্নাতকে তৃতীয় বিভাগ নিয়েও অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ নেন।

অভিযোগ থেকে আরও জানা যায়, যুক্তিবিদ্যা বিষয়ের প্রভাষক সতীশ চন্দ্র দীর্ঘদিন অনুপস্থিত থাকলেও অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগের পরে দুই লাখ টাকার বিনিময়ে ওই প্রভাষককে সম্পূর্ণ বেতন প্রদান করেন শরওয়ার আলম। মর্জিনা পারভিন নামের একজনের কাছে ৯ লাখ টাকা নিয়েও অফিস সহায়ক পদে নিয়োগ দেননি। রবিউল ইসলাম নামের একজনকে ১২ লাখ টাকার বিনিময়ে অফিস সহকারী পদে নিয়োগ দেন, পরে আরও ২ লাখ টাকা দাবি করেন শরওয়ার। রবিউল টাকা না দেওয়ায় তার বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট বন্ধ রাখেন।

তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ বিষয়ে অধ্যক্ষ শরওয়ার আলম বলেন, আমার এসএসসি ও স্নাতক তৃতীয় বিভাগ হলেও তৎকালীন নিয়োগ বিধিসম্মতভাবে হয়েছে। আগে কয়েকবার তদন্ত হয়েছে। কোনো আপত্তি ছিল না। এখন শিক্ষা অফিস তদন্ত করছে। নিয়োগ-বাণিজ্যের বিষয়টি প্রমাণ করতে পারবে।

এ বিষয়ে আদিতমারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আরিফ মাহফুজ বলেন, দুদকের পত্রের আলোকে তদন্ত শুরু করেছি। যথাসময়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।

জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, দুদকের প্রধান কার্যালয়ের পত্রের নির্দেশনা মোতাবেক সনদ জালজালিয়াতির মাধ্যমে অধ্যক্ষ নিয়োগের বিষয়টি জেলা শিক্ষা অফিস তদন্ত করছে। অধ্যক্ষ শরওয়ার আলমের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ এসেছে। তাই তার অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়টি সংশ্লিষ্ট উপজেলা শিক্ষা অফিসকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। যথাসময়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।

এনএ/রাতদিন

মতামত দিন