নির্দিষ্ট পেশা ছাড়াই স্বল্প সময়ে বিপুল সম্পদের মালিক পাপিয়া

গতকাল রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অভিযান চালিয়ে দেশত্যাগের আগে শামিমা নূর পাপিয়া ওরফে পিউ (২৮), তার স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরী ওরফে মতি সুমন (৩৮) এবং তাদের সহযোগী সাব্বির খন্দকার (২৯) শেখ তায়্যিবা (২২)-কে আটক করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন ১ এর একটি বিশেষ আভিযানিক দল।

আটককৃতদের বিরুদ্ধে অবৈধ অস্ত্র ব্যবসা, মাদক কারবার, চাঁদাবাজি, নারীসংক্রান্ত অনৈতিক কর্মকাণ্ড, জাল নোট সরবারহ, রাজস্ব ফাঁকি, অর্থ পাচারসহ বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৭টি পাসপোর্ট, বাংলাদেশি নগদ ২,১২,২৭০/- টাকা, বাংলাদেশি জাল নোট ২৫,৬০০/-, ভারতীয় রুপি ৩১০, শ্রীলঙ্কান মুদ্রা ৪২০, ইউএস ডলার ১১,০৯১ এবং ৭টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।

পরবর্তীতে শামিমা নূর পাপিয়া ও সুমন চৌধুরীর দেওয়া তথ্যমতে, আজ ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ভোর ৪টার সময় হোটেল ওয়েস্টিনে তাদের নামে বুকিংকৃত বিলাসবহুল প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুইট থেকে এবং ফার্মগেট এলাকার ২৮ নম্বর ইন্দিরা রোডস্থ ‘রওশনস ডমিনো রিলিভো’ নামক বিলাসবহুল ভবনে তাদের দুটি ফ্ল্যাটে অভিযান পরিচালনা করে ১টি বিদেশি পিস্তল, ২টি পিস্তলের ম্যাগজিন, ২০ রাউন্ড পিস্তলের গুলি, ৫ বোতল দামি বিদেশি মদ ও নগদ ৫৮,৪১,০০০/- টাকা, ৫টি পাসপোর্ট, ৩টি চেক, কিছু বিদেশি মুদ্রা, বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি ভিসা/এটিএম কার্ড উদ্ধার করা হয়।

আসামিদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে তাদের বর্তমান সম্পদ ও বিলাসবহুল জীবন সমন্ধে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য উঠে আসে। সুনির্দিষ্ট পেশা না থাকা সত্ত্বেও তারা স্বল্প সময়ে বিপুল সম্পত্তি ও অর্থ বিত্তের মালিক হয়েছে। ফার্মগেট এলাকাস্থ ২৮ ইন্দিরা রোডে তাদের ২টি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট, নরসিংদী শহরে ২টি ফ্ল্যাট, বিলাসবহুল ব্যক্তিগত গাড়ি ও নরসিংদীর বাগদী এলাকায় ২ কোটি টাকা মূল্যের ২টি প্লট আছে বলে জানায়। এ ছাড়াও তেজগাঁও এফডিসি গেটসংলগ্ন এলাকায় অংশীদারত্বে তাদের ‘কার একচেঞ্জ’ নামক গাড়ির শো রুমে প্রায় ১ কোটি টাকা বিনিয়োগ আছে এবং নরসিংদী জেলায় ‘কেএমসি কার ওয়াস অ্যান্ড অটো সলিউশন’ নামক প্রতিষ্ঠানে ৪০ লাখ টাকা বিনিয়োগ আছে বলেও আসামিরা জানায়। এ ছাড়াও দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে তাদের নামে-বেনামে অনেক অ্যাকাউন্টে বিপুলপরিমাণ অর্থ গচ্ছিত আছে বলেও জানা যায়। এ ব্যাপারে র‌্যাবের অনুসন্ধান অব্যাহত আছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর...

অনুসন্ধানকালে আসামিদের অধিকাংশ সময় রাজধানীর বিভিন্ন বিলাসবহুল হোটেলে অবস্থান করতে দেখা যায়। সবশেষ গত ১২/১০/২০১৯ হতে ১৩/০২/২০২০ পর্যন্ত তারা বিভিন্ন মেয়াদে মোট ৫৯ দিন হোটেল ওয়েস্টিনের কয়েকটি বিলাসবহুল রুমে অবস্থান করে এবং আনুসাঙ্গিক খরচসহ সর্বমোট ৮১,৪২,৮৮৮.৩১ টাকা নগদ পরিশোধ করে। তাদের এই বিপুলপরিমাণ অর্থের প্রকৃত উৎস জানতে চাওয়া হলে তারা কোনো সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেনি।

প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা যায়, আসামি শামিমা নূর পাপিয়া ওরফে পিউ ও তার স্বামী সুমন চৌধুরী নরসিংদী এলাকায় অবৈধ অস্ত্র ও মাদক কারবার, চাঁদাবাজি, চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণা, জমির দালালি, সিএনজি পাম্পের লাইসেন্স প্রদান, গ্যাস লাইন সংযোগ ইত্যাদির নামে সাধারণ মানুষের নিকট হতে বিপুলপরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করে আসছে। এই পর্যন্ত পাওয়া তথ্যমতে তারা পুলিশের এসআই ও বংলাদেশ রেলওয়েতে বিভিন্ন পদে চাকরি দেওয়ার নামে মোট ১১ লাখ টাকা, একটি কারখানায় অবৈধ গ্যাস সংযোগ দেওয়ার কথা বলে ৩৫ লাখ টাকা, একটি সিএনজি পাম্পের লাইসেন্স করে দেওয়ার কথা বলে ২৯ লাখ টাকাসহ ঢাকা ও নরসিংদী এলাকায় চাঁদাবাজি, মাদক ও অস্ত্র কারবারসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা অবৈধভাবে উপার্জন করেছে।

তাদের আয়ের অরেকটি উৎস হচ্ছে নারীদের দিয়ে জোরপূর্বক অনৈতিক কাজ করানো। তারা ঢাকাস্থ বিভিন্ন বিলাসবহুল হোটেলে অবস্থান করে কমবয়সী মেয়েদের জোরপূর্বক অনৈতিক কাজে বাধ্য করে। যাদের অধিকাংশই নরসিংদী এলাকা হতে চাকরি দেওয়ার কথা বলে এবং বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে নিয়ে আসা হয়। এসব অনৈতিক কাজে কেউ অস্বীকৃতি জানালে আসামিরা তাদের বিভিন্নভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে বলে অনুসন্ধানে জানা যায়।

এ ছাড়াও শামিমা নূর পাপিয়া ও তার স্বামী সুমন চৌধুরী এর নরসিংদী এলাকায় ‘কিউ অ্যান্ড সি’ নামক একটি ক্যাডার বাহিনী আছে। যাদের মাধ্যমে তারা নরসিংদীর বিভিন্ন এলাকায় চাঁদাবাজি, মাসোহারা আদায়, অস্ত্র ও মাদক কারবারসহ এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের জন্য সকল প্রকার অন্যায় কাজের সাথে জড়িত বলে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়। তাদের এই ক্যাডার বাহিনীর অনেকের নাম এর মধ্যে জানা গেছে, যাদের গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে র‌্যাবের অভিযান অব্যাহত আছে।   সূত্র: কালের কন্ঠ অনলাইন