পাক সেনাপ্রধানের মেয়াদ বাড়ল ৬ মাস

পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল হিসেবে মাত্র ছয় মাস বাড়ল কামার জাভেদ বাজওয়ার মেয়াদ। তিন বছরের জন্য পুনর্নিয়োগ দিয়ে সরকারি সিদ্ধান্তের বিপরীতে বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর এ সিদ্ধান্ত দেন দেশটির সর্বোচ্চ আদালত।

জেনারেল বাজওয়ার তিন বছরের মেয়াদ বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর মধ্যরাতে শেষ হওয়ার কথা। মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে ১৯ আগস্ট এক প্রজ্ঞাপন জারি করে তাকেই ফের তিন বছরের জন্য জেনারেল নিয়োগ দেয় সরকার।

মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর প্রথার বাইরে গিয়ে সেনাপ্রধানের পুনর্নিয়োগে সরকারি সিদ্ধান্তকে বুধবার, ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত স্থগিত ঘোষণা করেন সর্বোচ্চ আদালত। সেনাপ্রধানের পুনর্নিয়োগের ব্যাপারে আইনি জটিলতার বিষয়টি উল্লেখ করেন আদালত। এরপরই মন্ত্রিপরিষদ জেনারেল বাজওয়ার মেয়াদ বাড়িয়ে একটি নতুন প্রজ্ঞাপন অনুমোদন দেন।

সেনাপ্রধানের মেয়াদ বাড়ল, নাকি পুনর্নিয়োগ দেওয়া হলো, সেটি ঠিক করার দায়িত্ব সরকারের ওপর চাপিয়েছেন আদালত। নির্দেশ দিয়েছেন, সেনাপ্রধানের মেয়াদ বাড়ানো বা পুনর্নিয়োগ নিয়ে ছয় মাসের মধ্যে সংশ্লিষ্ট আইন করতে। এ সময়ের মধ্যে সেনাপ্রধান কি কি সুযোগ-সুবিধা পাবেন, সেটিও ঠিক করতে হবে সরকারকে।

প্রধান বিচারপতি আশিফ সাঈদ খোজা, বিচারপতি মিয়া মাজহার আলম খান মিয়ানখেল ও বিচারপতি সৈয়দ মনসুর আলি শাহের বেঞ্চ পর্যবেক্ষণ করেন যে বর্তমান সেনা আইন পরিষ্কার নয়। শীর্ষ বেঞ্চ মন্তব্য করেন, সেনা আইনে অস্পষ্টতা দূর করতে পারে পার্লামেন্ট। এ অস্পষ্টতা দূর করতে অন্য যে কোনো প্রতিষ্ঠানের চেয়ে পার্লামেন্ট উত্তম।

মুলতবি ঘোষণার আগে সরকারি আইনজীবীকে সতর্ক করে দিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, ছয় মাসের মধ্যে সেনাপ্রধানের মেয়াদ বাড়ানো বা পুনর্নিয়োগ নিয়ে পার্লামেন্ট আইন করবে-এ মর্মে আদালতের কাছে লিখিত দিতে হবে। ছয় মাসের মধ্যে সংশ্লিষ্ট আইন না হলে সেনাপ্রধানের পুনর্নিয়োগ অবৈধ হবে।

এর আগে জেনারেল আশফাক পারভেজ কায়ানির মেয়াদ ২০১০ সালে তিন বছর বাড়িয়েছিল পাকিস্তান পিপলস পার্টির সরকার। ২০১২ সালে ইসলামাবাদ উচ্চ আদালতে কায়ানির মেয়াদ বাড়ানোকে চ্যালেঞ্জ করে রিট হয়। তবে ইসলামাবাদ উচ্চ আদালত ওই রিটকে খারিজ করে দেন। ওই আদালত জানিয়েছিলেন, সংবিধানের ১৯৯ (৩) অনুচ্ছেদ বিষয়টিকে আদালতের এখতিয়ারের বাইরে রেখেছে।

আদালত কায়ানি মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়টিও নজরে আনেন। কোন আইনের ভিত্তিতে জেনারেল কায়ানি মেয়াদ বাড়ানো হয়েছিল-প্রশ্ন তোলেন আদালত। শুনানিতে আদালত বলেন, আমরা জানতে চাই, অবসরের পর জেনারেল কায়ানি পেনশনসহ কোন ধরনের সুযোগ-সুবিধা পেয়েছিলেন।

কায়ানির উত্তরসূরি ও বাজওয়ার পূর্বসূরী জেনারেল রাহিল শরিফ গত দু’দশকে একমাত্র সেনাপ্রধান যিনি সময় শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।

জেনারেলরা অবসরে যান না-সরকারি আইনজীবীর এমন মন্তব্যে আদালত বলেন, তাহলে কোন আইনের ভিত্তিতে রাহিল শরিফ অবসরে গেছেন? আপনি বলেছেন, জেনারেলরা অবসরে যান না; তারা যদি অবসরে না যান, তাহলে তো তাদের পেনশন পাওয়ার কথা নয়।

এর আগে বুধবার, ২৭ নভেম্বর আদালতের শুনানির পর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এক জরুরি বৈঠক হয় সরকারের অবস্থান পরিষ্কার করতে। ওই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও বেশ কয়েকজন মন্ত্রী অংশ নেন। অংশ নেন সেনাপ্রধান জেনারেল বাজওয়াও। ওই বৈঠকে অংশ নেয়ায় সেনাপ্রধানকে ভর্ৎসনা করেন আদালত।

আদালত বলেন, এটা খুবই আপত্তিকর, সেনাপ্রধান আদালতের শুনানির সারাংশে কি লেখা হচ্ছে, সেটি দেখা নিয়েই ব্যস্ত। ওনার কাজতো দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দেখভাল করা।