পাটগ্রামে চাকরি দে’য়ার নামে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ, প্রমান চাইলেন মাদ্রাসা সুপার

লালমনিরহাটের পাটগ্রামে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগের প্রলোভন দেখিয়ে এক অসহায় নারীর কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক মাদরাসার সুপারের বিরুদ্ধে। উপজেলার দহগ্রাম ইউনিয়নের একটি দাখিল মাদরাসার এবতেদায়ি শাখায় নিয়োগের প্রলোভন দেখিয়ে প্রায় ৬ লাখ ৭০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে ওই সুপারের বিরুদ্ধে।

অভিযুক্ত ওই সুপারের নাম মো. আজম আলী। তিনি  দহগ্রাম বালার ডাঙ্গা দাখিল মাদরাসার কর্মরত আছেন।

একজন মাদরাসা সুপারের এমন প্রতারণার ঘটনা  জানাজানি হলে উপজেলাজুড়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে।

ভুক্তভোগী ওই নারী সম্প্রতি মাদরাসা সুপার আজম আলীর বিরুদ্ধে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ দেন। যার অনুলিপি শিক্ষা মন্ত্রী , শিক্ষা সচিব, মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান, দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ও স্থানীয় সংসদ সদস্যদের বরাবর প্রেরণ করেছেন বলে জানান তিনি।

অভিযোগ দায়েরের কারনে  মাদরাসা সুপার বিভিন্ন লোকের মাধ্যমে ওই নারীকে হুমকি দিচ্ছেন বলে জানান ভুক্তভোগী শাহানাজ সুলতানা।

অভিযোগসুত্রে জানা যায়,  ২০০৪ সালে  লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম বালার ডাঙ্গা দাখিল মাদরাসায় এবতেদায়ী শাখায় প্রধান শিক্ষক পদে  নিয়োগের জন্য শাহানাজ সুলতানাকে প্রস্তাব দেন ওই মাদরাসার সুপার আজম আলী। নিয়োগের জন্য তিনি ৪ লাখ টাকা দাবি করেন। ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে অভিযোগকারী তার বাবার জমি বিক্রি করে সুপারকে ৩ লাখ টাকা ও শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ দেন।

এ অবস্থায় সুপার তাকে নিয়োগপত্র দেন। এর পাশাপাশি পেপার কাটিংসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রদান করলে তিনি শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে শুরু করেন। পরবর্তীতে ২০১৯ সালে মাদরাসাটি এমপিওভুক্ত হলেও এমপিওর তালিকায় বাদ পড়েন শাহানাজ।

তিনি আরো জানান, এমপিও ভুক্তির কথা বলে সুপার আজম আলী আবারও  তার কাছে ৭ লাখ টাকা দাবি করেন। নিরুপায় হয়ে গরু , ছাগল বিক্রি করে এবং এনজিওর টাকা ঋণ নিয়ে চিলার বাজার মহিলা মাদরাসার অফিস সহকারী মো. লুৎফর রহমান বুলু , বালার ডাঙ্গা মাদরাসার শিক্ষক মো. শহকত আলী ও অফিস সহকারী আমিনুল ইসলামের মাধ্যমে আবারও ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা সুপার আজম আলীকে দেন।

এরই মধ্যে এমপিওভুক্তির ফাইনাল পাঠানোর কথা বলে আমাকে দেয়া নিয়োগ সংক্রান্ত কাগজপত্র উল্লেখিত ব্যক্তিগণ এবং সুপার আজম আলী নিয়ে যান। এরপর এমপিও ভুক্তি করে দেয়ার কথা বলে আউলিয়ারহাট দাখিল মাদরাসার সুপার মো. আসাদুজ্জামান পরবর্তীতে দ্বিতীয়বার দাবি করা ৭ লাখ টাকার মধ্যে বাকি ৩ লাখ ৩০ হাজার পূণরায় দাবি করেন।

শিক্ষক হিসেবে এমপিও/বিল করার জন্য চাপ দিলে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২১ খ্রি. তারিখে মো. আসাদুজ্জামান  ভুক্তভোগীকে তাঁর বাড়িতে ডেকে একটি বৈঠক করে লিখিত কাগজে উভয়ের স্বাক্ষর নেন। উপরন্তু অবশিষ্ট টাকার জন্য চাপ অব্যাহত রাখে।

অতিরিক্ত এই টাকা দেওয়া সম্ভব না হওয়ায় ওই দুজন পরস্পর যোগসাজশে শাহানাজ সুলতানার নিয়োগের কাগজপত্র গায়েব করে দেয় এবং বলে রংপুরে এমপিও ফাইল রিজেক্ট হয়ে গেছে।

কাগজপত্র চাইলে মো. আসাদুজ্জামান আসাদ তাকে ভয় -ভীতি দেখান। হুমকি প্রদান করে বলেন, কিসের নিয়োগ । কোন কাগজপত্র দেয়া হবে না। কি করার আছে করেন।

আউলিয়ারহাট দাখিল মাদরাসার সুপার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘নিয়োগের ব্যাপারে ওই নারী অন্য মানুষকে কিছু টাকা দিয়েছে। এ ব্যাপারে লিখিত কাগজ আছে।’

দহগ্রাম বালার ডাঙ্গা দাখিল মাদরাসার অভিযুক্ত সুপার আজম আলীর সাথে মুঠোফোনে এ বিষয়ে কথা হলে তিনি বলেন, ‘আচ্ছা, সময়মতো বক্তব্য দেওয়া যাবে।’ বলে তিনি ফোন কলটি দেন। এর কিছুক্ষণ পর সুপার  মুঠোফোনে কল দিয়ে বলেন, ‘ওই নারী বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছে শুনেছি। অভিযোগটি তাঁকে প্রমান করাতে হবে। তদন্ত হলে জানতে পারবেন।’

জেএম/রাতদিন

মতামত দিন