পাটগ্রামে মিথ্যা অভিযোগে গাছে বেঁধে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন, আটক ৪

লালমনিরহাটের পাটগ্রামে এক ব্যক্তিকে রশি দিয়ে গাছে বেঁধে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। নির্যাতনের শিকার ওই ব্যক্তির নাম মোস্তফা আলী (৩৬)। এসময় তাঁর সঙ্গে থাকা নগদ অর্থ ও মোবাইল ফোন হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ করা হয়েছে।

গত শনিবার, ০৩ অক্টোবর সকালে ওই ব্যক্তিকে গাছে বেঁধে নির্যাতন করা হয়।

নিযার্ তনের শিকার মোস্তফা উপজেলার পাটগ্রাম ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের সর্দারপাড়া এলাকার আব্দুল গফুরের ছেলে। তিনি পেশায় রং মিস্ত্রি। এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। পাটগ্রাম থানা পুলিশ ৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।

পুলিশ ও এজাহার সূত্র জানা গেছে, উপজেলার পাটগ্রাম ইউনিয়নের সর্দারপাড়া প্রাণকৃষ্ঞ এলাকার আব্দুল গফুরের ছেলে মোস্তফা আলী রং মিস্ত্রির কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন।

প্রায় ৬ মাস আগে তার বড় ছেলে মোয়াজ আলী (১৩) অসুস্থ হলে তিনি পাশ্ববর্তী থানা কালীগঞ্জ এলাকা থেকে এক জন জনৈক কবিরাজ নিয়ে এসে চিকিৎসা করান।

অন্যদিকে তার প্রতিবেশী অভিযুক্ত হামিদুল ও তাঁর স্ত্রী তাছলিমা বেগমের মধ্যে সাংসারিক বিরোধ চলছিলো। এ কারনে তারাও মোস্তফার ছেলেকে চিকিৎসা করানো ওই কবিরাজের স্মরণাপন্ন হন। কবিরাজ তাদের কাছ থেকে চিকিৎসা বাবদ ১২ হাজার টাকা নেন। কিন্তু ওই চিকিৎসায় তাদের কোন কাজ হয়নি।

কবিরাজের চিকিৎসায় ওই দম্পতির সাংসারিক বিরোধের সমাধান না হওয়ায় তাঁরা মোস্তফা আলীকে দোষারোপ করতে থাকেন। প্রায়ই মোস্তফাকে গালিগালাজ করতেন। শারিরীক নিযার্তনের হুমকি দিতেন।

ঘটনার দিন সকাল সাড়ে ৭ টার দিকে মোস্তফা রং ক্রয় কেনার জন্য ৫০ হাজার টাকা নিয়ে রংপুরের উদ্যেশ্যে রওনা হন। পথে জগতবেড় ইউনিয়নের ডাকুয়াপাড়া এলাকায় পৌছালে ওই এলাকার হামিদুল ইসলাম (৪৫) ও তাঁর স্ত্রী তাছলিমা বেগম (৩২)সহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা দলবদ্ধ হয়ে মোস্তফা আলীর পথরোধ করে।

তারা মোস্তফার কাছে সেই ১২ হাজার টাকা দাবি করে। টাকা দিতে অস্বীকার করায় কাঁঠাল গাছের সাথে বেধে মধ্যযুগীয় কায়দায় মার পিট করে। এসময় তাঁর সঙ্গে থাকা ৫০ হাজার টাকা ও ১ টি মোবাইল ফোন কেড়ে নেয় তারা।

মধ্যযুগীয় কায়দায় গাছের সাথে রশি দিয়ে বেঁধে নির্যাতনের এই দৃশ্যে মোবাইল ফেনে ধারনকৃত ভিডিও দ্রুত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

মামলার প্রেক্ষিতে শনিবার রাতে পাটগ্রাম থানা পুলিশ অভিযুক্ত হামিদুল ইসলাম (৪৫) ও তাঁর স্ত্রী তাছলিমা বেগম (৩৫), আব্দুল খালেক ও ফাতেমা বেগমকে আটক করেন।

ঘটনার বিস্তারিত জানিয়ে নির্যাতনের শিকার মোস্তফা আলী বলেন, ‘আমি এই নিযার্তনের সুষ্ঠু বিচার চাই।’

পাটগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুমন কুমার মহন্ত জানান, গাছে বেঁধে নির্যাতনের ঘটনায় মোস্তফা আলীর স্ত্রী বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেছে। এ ঘটনায় পুলিশ চার জনকে আটক করে।

আটকদের গতকাল রোববার লালমনিরহাট আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

জেএম/রাতদিন