পীরগঞ্জে এক মণ ধানেও মিলছে না এক কৃষাণ

রংপুরের পীরগঞ্জে এক মণ ধানের মুল্যে একজন কৃষাণের মজুরীও হচ্ছে না। চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে পীরগঞ্জে ধানের বাজার মুল্যে ধ্বস নামায় একদিকে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন চাষীরা। অন্যদিকে কর্মসৃজন কর্মসুচী চালু থাকায় ধান কাটা কৃষাণের অভাবে কৃষকরা পাকা ধান ঘরে তুলতে পারছেন না।

উপজেলা কৃষি বিভাগ সুত্রে জানা গেছে, চলতি বোরো মওসুমে পীরগঞ্জের ১৫টি ইউনিয়নের ৩৬টি কৃষি ব্লকে প্রায় ২৩ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ হয়েছে। মাঠ এখন পাকা ধানে পরিপূর্ণ। কিন্তু কৃষাণ সংকটের কারনে ধান কর্তন করতে পারছেন না চাষীরা।

উপজেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার দফতর সুত্রে জানা গেছে, চলতি মওসুমে পীরগঞ্জে কর্মসৃজন কর্মসুচীর অধীনে ৪ হাজার ৭ শত ৯৭ জন নারী-পুরুষ শ্রমিক হিসেবে সম্পৃক্ত রয়েছেন। গত ২৯ এপ্রিল ওই কর্মসুচী শুরু হয়েছে, চলবে আগামী ৪০ কর্ম দিবস পর্যন্ত।

এ অবস্থায় কর্মসৃজন কর্মসূচীর কারনে প্রচন্ড শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে ওই এলাকায়। বৈরী আবহাওয়ার কারনে ধান চাষীদের উদ্বেগ বেড়ে তা রুপ নিয়েছে মহা দুশ্চিন্তায়। এমনিতে দেশে এ সময় ঝড় ও শিলা বৃষ্টি সহ প্রতিকুল আবহাওয়া বিরাজ করে, তারপরেও তারা যদি সময় মত ধান ঘরে উঠাতে না পারে তবে তারা ব্যপক ক্ষতিগ্রস্থ হবেন।

সরেজমিনে উপজেলার রসুলপুরের কৃষক সালাম, জয়নাল, মরারপাড়ার নাজমুল, চাপাবাড়ীর মশফিকুরসহ মিলকি, হরিপুর, মির্জাপুর, ভীমশহর, ভুজুবাড়ীসহ বেশ ক’টি গ্রাম ঘুরে সাধারণ চাষীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বোরো ধান নিয়ে তাদের উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠার কথা। ধান কর্তনের পুরো মওসুম চললেও পুরো ফসলের মাঠ ভরে আছে পাকা সোনালী রং এর বোরো ধানে। কৃষাণের অভাবে ফসল ঘরে তুলতে পারছে না চাষীরা।

মির্জাপুর গ্রামের কৃষক জুয়েল মিয়া, ভীমশহরের গফুর আলী, ভুজুবাড়ীর স্বাধীন, রইচ উদ্দিন জানান, কৃষাণ সংকটের কারণে বাধ্য হয়ে উচ্চ মুল্যে ধান কেটে নিচ্ছি। এবারে প্রতি একর জমির ধান কর্তনে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা পর্যন্ত ব্যয় হচ্ছে। যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ১ হাজার থেকে ১২শ’ টাকা বেশি।

অপরদিকে বাজারে প্রতি মণ ধানের মুল্য ৪’শ থেকে সাড়ে ৪’শ টাকা। আর একজন কৃষাণের মজুরী দু’বেলা খাবারসহ ৫’শ টাকা। ফলে এক মণ ধানে একজন কৃষাণের মজুরী পরিশোধ করা যাচ্ছে না। বৈরী আবহাওয়ার কারণে অনেকেই চড়া মূল্যে ধান কেটে নিতে বাধ্য হচ্ছেন।

কৃষক ও এলাকার সুধীজন মনে করেন, ধান কাটার মৌসুমে কর্মসৃজন কর্মসুচী স্থগিত থাকলে মজুর সংকট কিছুটা হলেও হ্রাস পাবে, যা কৃষকদের ধান কর্তনে সহায়ক হবে।

উপজেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মিজানুর রহমানও একে সমর্থন করে বলেন, চলতি বোরো মওসুমে কর্মসৃজন কর্মসুচীতে শ্রমিক সম্পৃক্ত থাকায় চাষীরা ধান কাটতে হিমশিম খাচ্ছেন। তবে এটি কয়েকদিনের জন্য বন্ধ রাখলে কৃষকরা উপকৃত হতো।

এসকে/রাতদিন