প্রাচীর নিয়ে তান্ডব, অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ বিশ্বভারতী

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বভারতীর পৌষমেলার মাঠে প্রাচীর তোলাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক  ভাঙচুর চালানো হয়েছে গোটা এলাকায়। ঘটনার জেরে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্বভারতী বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আনন্দবাজার জানিয়েছে এ খবর।

সোমবার, ১৭ আগস্ট সকালে মেলার মাঠ ঘেরার প্রতিবাদে এলাকার হাজারখানেক মানুষ ভাঙচুর চালান বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী অফিসে। ভাঙা হয় বিশ্বভারতীর একটি গেটও। ভেঙে দেওয়া হয় সদ্য শুরু হওয়া প্রাচীরের ভিতরের অংশ। বিক্ষুদ্ধ জনতা স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের সামনেই বন্ধ করে দেয় নির্মাণ কাজ।

তবে রাজ্যপাল টুইট করে বিশ্বভারতীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি এ বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন বলেও জানিয়েছেন টুইটে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আজকের ঘটনার পর অনির্দিষ্ট কালের জন্য বিশ্বভারতী বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।

বিশ্বভারতী কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, তাই এ প্রসঙ্গে তিনি কোনও মন্তব্য করবেন না বলে আজ নবান্নে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘বিশ্বভারতী কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়। আমি কোনও মন্তব্য করব না। তবে, রাজ্যপাল আমাকে ফোন করার পর আমি খোঁজ নিয়ে যা জেনেছি, ওখানে একটা নির্মাণকাজ চলছিল। সেখানে সেই কাজ চলার সময় কিছু বহিরাগত উপস্থিত ছিলেন। ছাত্ররা তার প্রতিবাদ জানায়। জেলাশসককে বলেছি, উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনে পড়ুয়া ও স্থানীয়দের নিয়ে বৈঠক করুন। আলোচনা করে সমস্যার সমাধান করতে হবে।’’

একই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী এ দিন ওই নির্মাণ প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কথাও বলেছেন। তিনি বলেন, ‘‘রবীন্দ্রনাথ বিশ্ববিশ্বভারতী গড়ে তুলেছিলেন প্রাকৃতিক পরিবেশে শিক্ষাদানের জন্য। আমি একটাই কথা বলব, বাংলার ঐতিহ্য যাতে নষ্ট না হয়, বিশ্বভারতীর গৌরব এবং ঐতিহ্য যাতে অটুট থাকে, তা আমাদের সকলের দেখা উচিত।’’ তাঁর কথায়, ‘‘নির্মাণ মানেই তা সৌন্দর্য  বাড়ায় এমনটা কিন্তু নয়।’’

এ সবের পর এ দিন ফের টুইট করেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। তিনি লেখেন, ‘‘বিশ্বভারতীতে তাণ্ডব ও ভাঙচুরের ঘটনা এবং তা রুখতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সময় মতো পদক্ষেপ করতে ব্যর্থ হওয়ায় অত্যন্ত পীড়িত আমি।

বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে সোমবার ভাঙচুর এবং তাণ্ডবের সময় পুলিশের অনুপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। সোমবার সন্ধ্যায় বিশ্বভারতীর সহকারী রেজিস্ট্রার একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। সেখানে বলা হয়েছে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরের মধ্যেই রয়েছে দু’টি থানা। তার পরেও এ দিন গন্ডগোলের সময় কোনও পুলিশকর্মী উপস্থিত ছিলেন না।

এ দিনের তাণ্ডবে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েক লক্ষ টাকার জিনিসপত্র নষ্ট হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে জানানো হয়েছে গোটা বিষয়টি আচার্য এবং শিক্ষা মন্ত্রকে জানানো হচ্ছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে ভর্তি এবং পরীক্ষার মতো জরুরি কাজকর্ম চলবে বলে জানানো হয়েছে।

পৌষমেলার মাঠ ঘেরা নিয়ে রোববার থেকেই উত্তপ্ত শান্তিনিকেতন। এ বছর পৌষমেলা হবে না বলে আগেই জানিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তার পর শনিবার থেকে শুরু হয় মেলার মাঠে প্রাচীর দেওয়ার কাজ। মেলার মাঠ ঘেরার প্রতিবাদ করেন স্থানীয় বাসিন্দাদের একটি বড় অংশ। ‘মেলার মাঠ বাঁচাও, শান্তিনিকেতন বাঁচাও’ নামে সোশ্যাল মিডিয়ায় পেজ তৈরি করে গত কয়েক দিন ধরেই শুরু হয়েছিল প্রতিবাদ।

এইচএ/রাতদিন