নুর নাহার (ছদ্মনাম)। ফেসবুকে হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার সোহেলের সাথে পরিচয়। এরপর টিকটক করতে গিয়ে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে তার। সেই সোহেলই কৌশলে নুর নাহারকে ভারতীয় পাচারকারীর হাতে তুলে দেন। এর আগেও সোহেল তাকে নিয়ে ভারতে গিয়ে দেহ ব্যবসায় বাধ্য করার চেষ্টা করেন। ২য়বার পাচারের চেষ্টাকালে দহগ্রাম সীমান্ত দিয়ে দেশে ফেরেন নুর নাহার। এসময় তাকে একাধিকবার ধর্ষণও করা হয়।
এ ঘটনায় পাটগ্রাম থানা পুলিশ গতকাল শনিবার দিনভর অভিযান চালায়। এতে পাচারদলের সদস্য আশরাফুল ইসলাম, মোকছেদুল হক, চম্পা বেগম নামে তিনজনকে গ্রেফতার করে।
রোববার, ২২মে পাচার ও গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন পাটগ্রাম থানার ওসি ওমর ফারুক।
তিনি জানান, ঘটনার মুল হোতা সোহেল মিয়া হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার বেতাপুর গ্রামের কিবরিয়ার পুত্র। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ৩ বছরে পূর্বে তাদের পরিচয় ও প্রেম। এরপর ওই দুজন অবৈধভাবে সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেন।
সেখানে প্রেমিকা নুর নাহারকে দিয়ে জোরপূর্বক দেহ ব্যবসা করার চেষ্টা করেন সোহেল। নুর নাহার বিষয়টি বুঝতে পেরে ৮/৯ মাস পর ভারতের কলকাতা থেকে কৌশলে একই পথে দেশে পালিয়ে আসেন।
এর কিছুদিন পর প্রেমিক সোহেলও দেশে ফিরে আসেন। চলতি বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি সোহেল তার প্রেমিকা নুর নাহারকে অনেক বুঝিয়ে হবিগঞ্জ আদালতের মাধ্যমে বিয়ে করেন। কিছুদিন পর নুর নাহার গর্ভবতী হন।
এ অবস্থায় আবারও প্রতারণার আশ্রয় নেন প্রেমিক থেকে স্বামী হওয়া সোহেল।
নুর নাহারকে ভারতে পাচারের জন্য আবারও পাচারকারীদের সাথে যোগাযোগ করেন। পাচারের উদ্দেশ্যে তাকে লালমনিরহাটের পাটগ্রামে পাঠিয়ে দেন সোহেল। গত ১৩ মে ভোরে পাচারকারীরা নুর নাহারকে উপজেলার দহগ্রাম সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাচার করে দেয়। এ সময় তাকে ধর্ষণও করেন ওই পাচারকারী দলের সদস্য মোকছেদুল।
নুর নাহার ভারতে প্রবেশের পর বুঝতে পারেন তার স্বামী তাকে পাচারকারীদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। ১৫ মে রাতে আবারও নুর নাহার কৌশলে দহগ্রাম সীমান্ত দিয়ে দেশে ফিরে আসেন। দেশে ফেরার পর এবার আশরাফুল ইসলাম নামে অপর এক পাচারকারী দলের সদস্যের হাতে পড়েন তিনি। আশরাফুলও তাকে ধর্ষণ করেন। এর পাশাপাশি টাকার জন্য নুর নাহারকে আটকিয়ে রাখেন পাচার দলের সদস্যরা।
সেখান থেকেও কৌশলে পালিয়ে পাটগ্রাম থানায় আশ্রয় নেন নুর নাহার।
ওসি ওমর ফারুক এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, এ ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ ইতোমধ্যে ৩ জনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। ঘটনার মুল হোতা প্রেমিক থেকে স্বামী হওয়া সোহেলকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।