বঙ্গবন্ধু কখনো বিরোধী দলের নেতাদের কটাক্ষ করে কিছু বলতেন না: রাষ্ট্রপতি

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, পার্লামেন্টে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে কেউ কথা বললে স্পিকার বিব্রত হতেন, কিন্তু বঙ্গবন্ধু হতেন না। উদার না হলে গণতান্ত্রিক মনোভাবাপন্ন না হলে এটা ভাবাই যেত না। ১৯৭৩ সালে পার্লামেন্টে আতাউর রহমান খান, এমএন লারমাসহ বিরোধী দলের কয়েকজন এমপি ছিলেন। তখনো দেখেছি তারা কথা বলতে চাইলেই সুযোগ পেতেন।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ‘মুজিববর্ষ-২০২০’ উপলক্ষে জাতীয় সংসদের বিশেষ অধিবেশনে দেয়া বক্তব্যে আজ সোমবার, ৯ নভেম্বর এ কথা বলেন তিনি।

রাষ্ট্রপতি বলেন, প্রায় সময় বঙ্গবন্ধুই স্পিকারকে বলে সে সুযোগ করে দিতেন। বিরোধী দলের প্রতি বঙ্গবন্ধুর আলাদা একটা মনোযোগ ছিল বলেই এটা সম্ভব হয়েছিল। রাজনৈতিক মতাদর্শের যত অমিলই থাকুক না কেন বঙ্গবন্ধু কখনো বিরোধী দলের নেতাদের কটাক্ষ করে কিছু বলতেন না বরং তাদের যথাযথ সম্মান দিয়ে কথা বলতেন। রাজনৈতিক শিষ্টাচার তার জীবনের একটা উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য ছিল।

তিনি বলেন, কোভিড-১৯ এর থাবায় গোটাবিশ্ব আজ বিপর্যস্ত। ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাপী মৃতের সংখ্যা ১২ লাখ ছাড়িয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যাও প্রায় পাঁচ কোটি। এখনও মৃত্যু ও আক্রান্তের মিছিলে প্রতিদিনই যোগ হচ্ছে শত শত মানুষ। বাংলাদেশেও করোনায় কেড়ে নিয়েছে ছয় হাজারের অধিক অমূল্য প্রাণ।

রাষ্ট্রপতি বলেন, আমি দুঃখভারাক্রান্ত হৃদয়ে স্মরণ করছি বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জিকে, যিনি আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে অপরিসীম অবদান রেখেছেন এবং আমৃত্যু বাংলাদেশের শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে ভূমিকা পালন করেছেন। করোনাকালে আমরা আরও হারিয়েছি সাবেক মন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম, বেগম সাহারা খাতুন, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ ও বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্যসহ অনেক রাজনৈতিক নেতাকে।

এছাড়া হারিয়েছি বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, জাতীয় অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী, মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার মেজর জেনারেল (অব.) সি আর দত্ত, লে. কর্নেল (অব.) আবু ওসমান চৌধুরী, বিশিষ্ট আইনজীবী ও অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এবং প্রখ্যাত আইনজীবী ও সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার রফিক-উল হকসহ শিক্ষা, সংস্কৃতি, ক্রীড়া, রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনের অনেক ব্যক্তিকে। আমি তাদের আত্মার মাগফিরাত ও শান্তি কামনা করছি।

তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কিছু বলতে গেলে অনিবার্যভাবে এসে পড়ে ইতিহাস, ইতিহাসের পরম্পরা। ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ তৎকালীন গোপালগঞ্জ মহকুমার নিভৃতপল্লী টুঙ্গীপাড়ার এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে তার জন্ম। ছোটবেলা কেটেছে গ্রামের কাদাজল, মেঠোপথ আর প্রকৃতির খোলামেলা পরিবেশে। পরোপকার আর অন্যের দুঃখকষ্ট লাঘবে সবসময় তিনি নিজেকে জড়িয়ে নিতেন। নিজের সুখ-দুঃখের কথা না ভেবে অন্যকে নিয়ে ভাবতেন। সেই থেকে শুরু। জীবনের প্রতিটি ক্ষণে যেখানেই অন্যায়-অবিচার, শোষণ-নির্যাতন দেখেছেন, সেখানেই প্রতিবাদে নেমে পড়েছেন। কখনো নিজের এবং পরিবারের গণ্ডির মধ্যে বাঁধা পড়েননি। ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়িয়েও গেয়েছেন বাংলা, বাঙালি আর বাংলাদেশের জয়গান। ফাঁসির সেলের পাশেই কবর খোঁড়া হচ্ছে জেনেও বাঙালির স্বাধীনতার লক্ষ্যে ছিলেন অবিচল ও অনড়। আজীবন বাংলা ও বাঙালিকে ভালোবেসে গেছেন, স্থান করে নিয়েছেন মানুষের মনের মণিকোঠায়।

এইচএ/রাতদিন