বহু রোগের যম ‘শালগম’

শীতকালীন সবজি হিসেবে পরিচিত শালগম। এটি এক প্রকার রূপান্তরিত মূল এবং মাটির নিচের অংশ খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। অন্য রকম একটা গন্ধের কারণে অনেকে শালগমের কথা শুনলেই নাক কুঁচকান। অথচ শালগম অত্যন্ত পুষ্টিকর একটি সবজি।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সালফারের উপস্থিতির কারণেই শালগমে এ ধরনের গন্ধ হয়। মজার ব্যাপার হলো, এই সালফার ব্রঙ্কাইটিস জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করে। একসময় ব্রঙ্কাইটিস হলে লোকে নিরাময়ের জন্য দুধ দিয়ে রান্না করে শালগম খেতেন। এছাড়া অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট-সমৃদ্ধ হওয়ায় যেকোনো রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার প্রাকৃতিক ক্ষমতা আছে এই সবজিটির।

পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে, শীতকালীন এই সবজিতে প্রচুর ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম ও খাদ্য-আঁশ আছে। এর পাতা শাক হিসেবে খাওয়া যায়, যা অত্যন্ত পুষ্টিকর। প্রতি ১০০ গ্রাম ভক্ষণযোগ্য শালগমে রয়েছে- ১ দশমিক ৪ গ্রাম আমিষ, ৩ দশমিক ৮ গ্রাম শর্করা, শূন্য দশমিক ৯গ্রাম আঁশ, শূন্য দশমিক ২ গ্রাম চর্বি, ২১ কিলোক্যালরি শক্তি, ২৪ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ৪০ মিলিগ্রাম ফসফরাস এবং ১৪ মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি।

২০১৩ সালে এক ব্রিটিশ গবেষণায় দেখা যায়, রক্তচাপ কমাতে ভীষণ কার্যকর এ সবজি। পটাশিয়াম থাকায় এটি ধমনীকে প্রশস্ত করে এবং দেহ থেকে সোডিয়াম বের করে দিতে সাহায্য করে।

শালগম পুষ্টি উপাদান ও ফ্ল্যাভনয়েডে সমৃদ্ধ বলে স্বাস্থ্যকর মেমব্রেন এর বৃদ্ধিকে উৎসাহিত করে

এতো গেল পুষ্টিগুণ। চলুন শালগমের কিছু ওষধিগুণ সম্পর্কে জেনে নিই-

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে

যদি ঘন ঘন ঠাণ্ডা ও জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা থাকে, তাহলে খাদ্য তালিকায় শালগম যোগ করুন। এটি আপনার ইমিউনিটিকে উদ্দীপিত করতে সাহায্য করবে। শালগম পুষ্টি উপাদান ও ফ্ল্যাভনয়েডে সমৃদ্ধ বলে স্বাস্থ্যকর মেমব্রেন এর বৃদ্ধিকে উৎসাহিত করে।

খারাপ কোলেস্টেরল কমায়

যাদের কোলেস্টেরলের সমস্যা আছে তারা শালগম খেয়ে উপকৃত হতে পারেন। এর কারণ শালগম পাকস্থলীতে অনেক বেশি পিত্তরস শোষণ করতে পারে, যা শরীরের খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।

হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়

ভিটামিন ও পটাসিয়াম ছাড়াও শালগম ক্যালসিয়ামেও সমৃদ্ধ বলে হাড়ের জন্য উপকারী। সুস্থ ও শক্তিশালী হাড়ের জন্য আপনার খাদ্য তালিকায় শালগম যুক্ত করুন।

পরিপাকের উন্নতি ঘটায়

শালগমে প্রচুর ফাইবার থাকে বলে হজমে সাহায্য করে। যদি আপনার হালকা কোষ্ঠকাঠিন্যের প্রবণতা থাকে তাহলে শালগম এই পরিস্থিতি থেকে কিছুটা মুক্তি দিতে পারে।

রক্তজমাট বাঁধাতে সাহায্য করে

শালগম ভিটামিন-কে এর চমৎকার উৎস, যা সঠিকভাবে রক্তজমাট বাঁধার জন্য অত্যন্ত আবশ্যক। ক্যালসিয়ামকে প্রসেস করা ও ধমনীর স্বাস্থ্যের জন্যও ভিটামিন-কে প্রয়োজনীয়। ধমনীর শক্ত হয়ে যাওয়া প্রতিরোধ করে ভিটামিন-কে।

দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটায়

ইমিউন সিস্টেম ঠিকভাবে কাজ করার জন্য এবং ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধিকে প্রতিরোধ করার জন্য ভিটামিন-এ প্রয়োজনীয়। শালগম ভিটামিন-এ তে ভরপুর থাকে বলে দৃষ্টিশক্তির উন্নতিতে সাহায্য করে।

আরথ্রাইটিসের বিরুদ্ধে কাজ করে

যারা রিউমাটয়েড আরথ্রাইটেসে ভুগছেন তাদের জন্য শালগম উপকারী। কারণ শালগমে ভিটামিন-এ, সি, ই, ক্যালসিয়াম ও কপার থাকে, যা এই ধরণের আরথ্রাইটেসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে সাহায্য করে।

অ্যানিমিয়া বা রক্তশূন্যতা প্রতিরোধ করে

শালগম ফলিক এসিডে সমৃদ্ধ, যা কোষের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং অ্যানিমিয়া প্রতিরোধ করে। এই ভিটামিন জন্মগত ত্রুটি প্রতিরোধে সাহায্য করে।

এনএ/রাতদিন