বাংলাদেশসহ ১৩১ দেশের ‘লকডাউন’ চিত্র তুলে ধরল গুগল

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থামাতে প্রায় গোটা বিশ্বেই চলছে লকডাউন। বাংলাদেশও চলছে অঘোষিত ‘লকডাউন’। আর এ কারণে জরুরি কিছু সেবা ছাড়া বন্ধ রয়েছে দোকানপাট, শপিং মল, হোটেল, রেস্তোরাঁ থেকে গণপরিবহণ। দেশে সরকারি নিষেধাজ্ঞার কারণে বেড়েছে বাড়িতে থাকার প্রবণতা। কিন্তু সেই পার্থক্য কতটা তার একটা চিত্র তুলে ধরল গুগল।

বাংলাদেশসহ ১৩১টি দেশের পরিসংখ্যান তুলে ধরে গুগল দেখিয়েছে, হোটেল-রেস্তোরাঁ, পার্ক, থিয়েটার, অফিস থেকে শুরু করে মুদি বা ওষুধের দোকানে মানুষের যাতায়াত বা উপস্থিতি যেমন কমেছে, তেমনই বেড়েছে বাড়িতে থাকার হার। একই ভাবে কমেছে বাস, ট্রেনের মতো গণপরিবহণব্যবস্থাও। ইরান এবং চিনে গুগল নিষিদ্ধ থাকায় ওই দুটি দেশের তথ্য পাওয়া যায়নি।

তথ্য জোগাড় করতে গুগল ম্যাপের সাহায্য নিয়েছে গুগল। অঞ্চলভিত্তিক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় একটি নির্দিষ্ট সময়ে কত লোক অবস্থান করছে, তার যোগফলের উপর ভিত্তি করে এই পরিসংখ্যান তৈরি হয়েছে। সময়সীমা ধরা হয়েছে ১৬ মার্চ থেকে ২৯ মার্চ। তবে বিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ হিসেবে গুগল বলেছে, এই তথ্যের উপর ভিত্তি করে চিকিৎসা সংক্রান্ত কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হবে না।

গুগলের চিফ হেল্থ অফিসার কারেন ডিসালভো তাঁর ব্লগে লিখেছেন, ‘গত কয়েক সপ্তাহের প্রবণতা আমরা দেখেছি। তাতে দেখানো হয়েছে, কত শতাংশ মানুষের যাতায়াত কমেছে বা বেড়েছে। তবে সঠিক সংখ্যাটা জানানো হবে না।’

গুগলের মতে, এই তথ্যের সাহায্যে সংশ্লিষ্ট দেশগুলির সরকারের পক্ষে পরিস্থিতি বোঝা সহজ হবে। পাশাপাশি কোন এলাকায় মানুষের যাতায়াত বেশি, সেটা বিশ্লেষণ করে তাঁদের প্রয়োজনীয়তা বুঝতেও সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারকে সাহায্য করবে।

বাংলাদেশের চিত্র:

গুগলের প্রতিবেদন বলছে, এই আদেশের ফলে বাংলাদেশে কাঁচা বাজার, মুদি দোকান, খাবারের দোকান, ফার্মেসিতে মানুষের যাতায়াত কমেছে ৪৬ শতাংশ। 

আবাসিক হোটেল, মোটেলসহ এরকম জায়গায় যাতায়াত কমেছে ৬৮ শতাংশ।

পার্ক, সমুদ্র সৈকত, উদ্যান বা মুক্ত এলাকা- যেসব জায়গায় মানুষ বিনোদনের জন্য যায়, সসেব জায়গায় এই সময়ে যাতায়াত ২৬ শতাংশ কমেছে

গণপরিবহন, বাস টার্মিনাল, রেলওয়ে স্টেশনের মত জায়গা, যেখানে প্রায় সব সময় ভিড় লেগে থাকে, তেমন জায়গাগুলোতেও এখস মানুষের আনাগোনা ৬৬ শতাংশ কমে গেছে।

অফিসপাড়া, কলকারখানা বা যেসব জায়গায় মূলত কর্মজীবীদের আনাগোনা বেশি, সেসব এলাকায় মানুষের চলাচল কমেছে ৬০ শতাংশ। এর বিপরীতে আবাসিক এলাকাগুলোতে মানুষের চলাচলের চিহ্ন বেড়েছে ২৪ শতাংশ।

ইটালীর চিত্র:

করোনাভাইরাসের সংক্রমণে এখনও পর্য়ন্ত মৃতের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ইটালিতে। আক্রান্তের সংখ্যাও বিপুল। পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, লকডাউনের প্রভাবও সবচেয়ে বেশি সেই ইটালিতেই।

গুগলের হিসেবে বিনোদন ও হোটেল-রেস্তোরাঁয় মানুষের যাতায়াত কমেছে ৯৪ শতাংশ। একই ভাবে মুদি ও ওষুধের দোকানে ৮৫ শতাংশ, পার্কে ৯০ শতাংশ, কর্মক্ষেত্রে ৬৩ শতাংশ কমেছে। গণপরিবণে মানুষের যাতায়াত কমেছে ৮৭ শতাংশ। উল্টোদিকে বাড়িতে থাকার হার বেড়েছে ২৪ শতাংশ। মৃত্যুহারে ইটালির পরেই রয়েছে স্পেন। সেখানকার পরিসংখ্যানও ইটালির কাছাকাছি। কোথাও সামান্য বেশি, কোনও ক্ষেত্রে কিছুটা কম।

ভারতে লকডাউনের প্রভাব:

ভারতে সংক্রমণ ইটালি, স্পেন বা আমেরিকার তুলনায় অনেক কম। কিন্তু তার পরেও লকডাউনের জেরে গতিশীলতা কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে। এমনকি, সব বিভাগের গতিশীলতা কমার নিরিখে আমেরিকার চেয়ে ভাল অবস্থায় ভারত। যেমন হোটেল-রেস্তোরাঁয় আমেরিকায় উপস্থিতির হার কমেছে ৪৭ শতাংশ, ভারতে ৭৭ শতাংশ। মুদি ও ওষুধের দোকানে আমেরিকায় কমেছে ৭৭ শতাংশ, ভারতে কমেছে ৬৫ শতাংশ। বাড়িতে থাকার প্রবণতা বৃদ্ধির পরিসংখ্যান ভারত ও আমেরিকায় একই– ২২ শতাংশ।

এবি/রাতদিন