বুড়িমারী স্থলবন্দরে করোনাভাইরাস পরীক্ষা: দায়সারাভাবে শুরু চলছে সেভাবেই, বাড়ছেই ঝুঁকি

পৃথিবীজুড়ে মহামারী আকার ধারণ করা করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে অন্যান্য স্থলবন্দরের মতো লালমনিরহাটের বুড়িমারী স্থলবন্দরে করোনা শনাক্তকরনে মেডিক্যাল টিম বসানো হয় গত ২৭ জানুয়ারি। তখন থেকেই অনেকটা দায়সারাভাবে চলছে স্বাস্থ্যপরীক্ষা। এভাবেই বিভিন্ন দেশের যাত্রীরা ঢুকছেন বাংলাদেশে। ক্রমান্বয়ে বাড়তেই থাকছে করোনা ঝুঁকি।

মঙ্গলবার, ১০ মার্চ সরেজমিনে দেখা যায়, প্রথম দিনের মতো আজও সেখানে যাত্রীদের নামমাত্র স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে। শুধুমাত্র জ্বর মাপা হ্যান্ড থার্মাল স্ক্যানার যন্ত্র ছাড়া তেমন কিছু নেই মেডিক্যাল টিমের কাছে।

এখানে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের দুইটি দল কাজ করছেন। ভারতীয় পাসর্পোটধারী যাত্রীদের বাংলাদেশে আসার সময় তাদের দেশের অভিবাসন চৌকিতে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে না। ফলে বাংলাদেশে ঠিকমতো স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা না হলে এদের মাধ্যমে করোনাভাইরাস বাংলাদেশেও প্রবেশ করার সমুহ সম্ভাবনা থাকছে।

অন্যদিক বাংলাদেশে করোনাভাইরাস ধরা পরার পর থেকে ভারতীয় ইমিগ্রেশন শুধুমাত্র বাংলাদেশ থেকে তাদের দেশে প্রবেশ করা পাসর্পোটধারী যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছেন।

সরেজমিন দেখা যায়, এদিন সনাতন হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব দোলযাত্রা (হোলি) উপলক্ষে ভারতের চ্যাংরান্ধা শুল্ক স্টেশন ও ভারতীয় আমদানি-রপ্তানি অ্যাসোসিয়েশন তাদের পণ্যবাহী ট্রাক এক দিন বন্ধ রেখেছে বুড়িমারী স্থলবন্দরে ।

স্বাস্থ্য পরীক্ষা। ছবি: রাতদিন

জানা গেল, এ স্থলবন্দর দিয়ে প্রতিদিন বাংলাদেশ, ভারত, ভূটান নেপাল থেকে গড়ে পাঁচ শতাধিক পাসপোর্টধারী যাত্রী যাতায়াত করেন।

আর গত সোমবার এ স্থলবন্দর দিয়ে ২০১ জন পাসপোর্টধারী যাত্রী ও ৩৫৭ জন ভারতীয় ট্রাক চালক এ দেশে প্রবেশ করেছেন। শুরু থেকে কেবল থার্মোমিটার দিয়ে জ্বর মাপা হলেও গত ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের দেয়া হ্যান্ড থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে যাত্রীদের শরীরের তাপমাত্রা মাপা হচ্ছে ।

ভারত থেকে আসা শেরপুর জেলার বাসিন্দা মলয় চাকী ও গোবীন্দ চন্দ্র সাহা জানান, ‘ভারত থেকে আসার সময় তাদের ভারতে কোন স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়নি। বাংলাদেশে ইমিগ্রেশনে কত্যর্বরত চিকিৎসক জিজ্ঞেস করেন কোথায় থেকে এসেছি, জ্বর ছিল কিনা আর তাপমাত্রা মেপে দেখেছে। ’

দেখা গেছে, অভিবাসন চৌকির প্রবেশ মুখে অভিবাসন কাস্টসম কর্মকর্তার কার্যালয়ের একটি কক্ষে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার মো. রাসেল আহমেদসহ তিন স্বাস্থ্য কর্মী মুখে মাস্ক দিয়ে বসে আছেন। ভারত থেকে আসা কয়েকজন যাত্রীর শরীরে জ্বর, মাথা ব্যথা, ঠান্ডা কাঁশি, সমস্ত শরীর ব্যথা অনুভবসহ রোগের উপসর্গ রয়েছে কিনা জিজ্ঞাসা করলেন। এ ছাড়াও তারা কোথা থেকে এসেছেন, কোথায় থাকেন সে বিষয়েও জানতে চাইলেন তিনি। এরপর হ্যান্ড থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে যাত্রীদের শরীরের তাপমাত্রা মাপলেন।

তার সাথে কথা হলে তিনি জানান, ‘আজ ভারতীয় ট্রাক স্থলবন্দর প্রবেশ না করায় শুধুমাত্র পাসর্পোট যাত্রীদের মাত্রাতিরিক্ত জ্বর, কাশি, সর্দি, শ্বাসকষ্ট,গলা ব্যথা বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা ও যাত্রীদের হ্যান্ড থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে তাপমাত্রা মাপা হচ্ছে।

শুধু হ্যান্ড থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে করোনাভাইরাস সনাক্তকরণ কতোটা সম্ভব? সে বিষয়ে তিনি কোন মন্তব্য করেন নি।

তবে তিনি জানান, যদি কারো মধ্যে করোনার উপসর্গ পাওয়া যায় তাহলে তাকে বিশেষ সতর্কতার সাথে উপজেলা বা জেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পযর্বেক্ষনে রাখা হবে। এরপর ভাইরাস শনাক্ত করতে প্রয়োজনে ঢাকায় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রন ও গবেষণা ইনষ্টিটিউটে (আইডিসিআর) পাঠানো হবে। তবে গতকাল পযর্ন্ত এ ধরনের কাউকে পাওয়া যায়নি।

জেএম/রাতদিন