বুড়িমারী হত্যাকান্ড: পাটগ্রাম ইউএনও’র দায়িত্ব অবহেলার তদন্ত বৃহষ্পতিবার

রংপুর ক্যান্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাবেক গ্রন্থাগারিক মো. সহিদুন্নবী জুয়েলকে (৫০) পিটিয়ে-পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) কামরুন নাহারের বিরুদ্ধে দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগ তদন্তে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছেন জেলা প্রশাসক।

আগামীকাল বৃহস্পতিবার, ২৫ মার্চ সকালে বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদ হলরুমে এ তদন্ত কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হবে বলে নিশ্চিত করেছেন লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর।

এর আগে গত বছরের ২৯ অক্টোবর বিকেলে পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে কোরআন অবমাননার গুজব ছড়িয়ে সহিদুন্নবী জুয়েলকে পিটিয়ে ও পুড়িয়ে হত্যা করা হয়।

নিহত যুবক আবু ইউনুস মো. সাহিদুন্নবী জুয়েল রংপুর শহরের শালবন মিস্ত্রিপাড়ার আব্দুল ওয়াজেদ মিয়ার ছেলে। তিনি রংপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাবেক গ্রন্থাগারিক।

গণবিজ্ঞাপ্তিতে বলা হয়, গত বছরের ২৯ অক্টোবর বিকেলে পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে কোরআন অবমাননার গুজব ছড়িয়ে সহিদুন্নবী জুয়েলকে পিটিয়ে ও পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। ওই সময়ের পাটগ্রাম  ইউএনও কামরুন নাহারের(পরিচিতি নং- ১৭৪৬৭) দায়িত্ব ও কর্তব্যে অবহেলা ও অদক্ষতার অভিযোগের তদন্ত করা হবে। তাই বৃহস্পতিবার (২৫ মার্চ) সকালে সর্বসাধারনকে উপস্থিত থেকে তদন্ত সহযোগীতা করার অনুরোধ করা হয়।

একই সাথে বিজ্ঞাপ্তিটি ব্যাপক ভাবে প্রচার করতে পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভুমি) ও বুড়িমারী ইউপি চেয়ারম্যানকে অনুলিপি পাঠানো হয়েছে।

জেলা প্রশাসকের জারি করা গণবিজ্ঞাপ্তির পত্র পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন সদ্য যোগদান করা পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) রাম কৃষ্ণ বর্মণ।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর জানান, মন্ত্রপরিষদ বিভাগের নির্দেশনায় এ তদন্ত শুরু হয়েছে। এটি একটি প্রশাসনিক তদন্ত।  

উল্লেখ্য, গত ২৯ অক্টোবর বিকেলে পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে আবু ইউনুস মো. সাহিদুন্নবী জুয়েল ও সুলতান রুবায়াত সুমন নামে একজনকে সঙ্গে নিয়ে বুড়িমারী বেড়াতে আসেন। বিকেলে বুড়িমারী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে আসরের নামাজ আদায় করেন তারা। নামাজ শেষে পাঠ করার জন্য মসজিদের তাকে রাখা কোরআন শরিফ নামাতে গিয়ে অসাবধানতাবশত কয়েকটি কোরআন পড়ে যায়।

এরপর আশপাশের লোকজন ছুটে এসে সন্দেহবশত জুয়েল ও সুলতান রুবায়াত সুমনকে পাশে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) ভবনের একটি কক্ষে আটকে রাখেন। খবর পেয়ে পাটগ্রাম উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউএনও, ওসি বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদে যান।  পার্শ্ববর্তী গ্রামে গুজব ছড়িয়ে উত্তেজিত হয়ে বিক্ষুব্ধ জনতা ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের দরজা-জানালা ভেঙে প্রশাসনের কাছ থেকে জুয়েলকে ছিনিয়ে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে। পরে মরদেহ টেনে পাটগ্রাম বুড়িমারী মহাসড়কে নিয়ে আগুনে পুড়িয়ে ছাই করে দেয় স্থানীয়রা।

সন্ধ্যা থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পাটগ্রাম ও হাতীবান্ধা থানা পুলিশ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা দফায় দফায় চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। সে সময় বিক্ষুব্ধ জনতার ছোড়া ইট পাথরের আঘাতে পাটগ্রাম থানার ওসি সুমন্ত কুমার মহন্তসহ ১০ জন পুলিশ সদস্য আহত হন। জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে ১৭ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে পুলিশ।

রাত সাড়ে ১০টার দিকে লালমনিরহাটের ডিসি আবু জাফর ও এসপি আবিদা সুলতানা অতিরিক্ত পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

এ ঘটনায় হত্যাসহ পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করা হয়। ঘটনাস্থলের ভিডিও দেখে আসামি শনাক্ত করে অভিযান চালিয়ে এখন পর্যন্ত ৪৭ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা সবাই বুড়িমারী এলাকার বাসিন্দা।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ও জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটি বুড়িমারীতে কোরআন অবমাননার কোনো সত্যতা পায়নি। গুজব ছড়িয়ে জুয়েলকে পিটিয়ে হত্যা ও পরে মরদেহ পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে বলেও উল্লেখ করেছেন দু’টি তদন্ত কমিটির সদস্যরা।

জেএম/রাতদিন

মতামত দিন