ভারতে জনপ্রিয় এখন গোবরের শ্যাম্পু ও টুথপেস্ট

হিন্দু ধর্মে গরুকে দেবতা হিসাবে দেখা হয়, তাই ভারতের অনেক রাজ্যে গরু জবাই নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ভারতে এখন স্বাধীনতার ৭০ বছর পালন করা হচ্ছে, কিন্তু গরু নিয়ে বির্তক যেন সবকিছু ছাড়িয়ে গেছে। বিশেষ করে হিন্দুত্ববাদী রাজনৈতিক দল বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর থেকে গরু নিয়ে হইচই দিন দিন আরও বাড়ছে।

গো-হত্যা ও গো-রক্ষাকে কেন্দ্র করে গত কয়েক বছরে শতাধিক সংখ্যালঘু মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন ভারতে। তবে এরই মধ্যে ভারতের বাজারে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে গো-মূত্রের তৈরি সাবান, শ্যাম্পু, ফেসপ্যাক, টুথপেস্ট-সহ প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি নানা প্রসাধনী জিনিস।

ভারতে সোশ্যাল মিডিয়ায় অনলাইনে বিক্রি হচ্ছে গো-মূত্র, ঘুঁটে বা গোবর। অনলাইনে প্রাকৃতিক উপায়ে ওষুধ বিক্রির পাশাপাশি ঘুঁটে, গো-মূত্র বিক্রি শুরু করেছিল ভারতের হিন্দু ধর্মগুরু বাবা রামদেবের সংস্থা পতঞ্জলী।

রামদেবের দেখানো সেই পথেই এ বার হাঁটা শুরু করেছে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক প্রভাবিত সংস্থা (আরএসএস)।

শুধু গো-মূত্র বা ঘুঁটে নয়, এ বার অনলাইনে এই গো-মূত্রের তৈরি সাবান, শ্যাম্পু, ফেসপ্যাক, টুথপেস্ট-সহ প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি নানা প্রসাধনী জিনিস বিক্রি করতে নামছে সংস্থাটি।

সম্প্রতি ভারত সরকার ঘোষণা করে গরুজাত পণ্যের কোনো উদ্যোগ নিলে তাতে সরকার ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ দেবে। সেই ঘোষণা অনেককেই আগ্রহী করে তুলেছে নতুন এই খাতের ব্যবসায়।

সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট নতুন বছরের প্রথম দিন একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ভারতে গরুকে কেন্দ্র করে নতুন নতুন বিভিন্ন ব্যবসা ও উদ্ভাবন নিয়ে।

“Would you use a cow dung face wash? They do in India” শিরোনামের ওই প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয় কিভাবে ধীরে ধীরে ভারতের বাজারে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে গরুজাত এমন অনেক পণ্য, যেগুলো এক সময় বানানো যায়- এমনটাই ভাবা যায়নি।

প্রতিবেদনে জানানো হয়, গোবর থেকে তৈরি সাবান, শ্যাম্পু, ফেইসওয়াশ, এমনকি টুথপেস্টও তৈরি হচ্ছে এবং সেগুলো বিক্রিও হচ্ছে প্রচুর।

এসব পণ্য বিক্রির জন্য নিয়মিত অর্ডার পড়ছে অ্যামাজন, ফ্লিপকার্ট বা ই-বে’র মতো বড় বড় অনলাইন শপিং সাইটগুলোতে।

মুম্বাইয়ের ৩৬ বছর বয়সী উমেশ সনি একজন মাইক্রোবায়োলজিস্ট। তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন কাওপ্যাথি নামের একটি প্রতিষ্ঠান। ২০১২ সাল থেকে তিনি গরুর গোবর দিয়ে নানান পণ্য তৈরি করছেন। এরমধ্যে জনপ্রিয়তা পেয়েছে সাবান।

আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে গরুর গোবর থেকে তিনি আরও নানান ধরনের পণ্য তৈরি করেন। যেমন, গোবরের শ্যাম্পু, গোবরের টুথপেস্ট।

তিনি জানান, প্রথম দিকে মূলত এসব পণ্য তিনি গিফট করতেন। আর এখন ১৪টি দেশের ৪০০ এর বেশি হোলসেল দোকানে তিনি পণ্য পাঠান। বর্তমানে তার কোম্পানির বার্ষিক টার্নওভার আড়াই কোটি রুপির বেশি। সম্প্রতি তিনি গরুর মূত্র প্রক্রিয়াজাত করে তা থেকে কফিও তৈরি করেছেন।

উল্লেখ্য, এরই মধ্যে আরএসএস পরিচালিত ফার্মেসি সংস্থা দীনদয়াল ধাম বিক্রি শুরু করেছেন গো মূত্র- গোবর দিয়ে তৈরি ৩০ রকমের পণ্য, যা শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী বলে দাবি করা হয়েছে।

দীনদয়াল ধামের সহসচিব মনিশ গুপ্ত জানান, সাধারণ মানুষের চাহিদার কথা মাথায় রেখেই বিভিন্ন রকম আয়ুর্বেদিক পণ্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। গোমূত্রের তৈরি জিনিসের চাহিদা ক্রমেই আরও বাড়বে বলেও দাবি মনিশ গুপ্তের।

এনএ/রাতদিন