রংপুর বিভাগে আইসিইউ বেড মাত্র ২৬, দুটি পিসিআর ল্যাবে করোনার নমুনা পরীক্ষায় হিমশিম

রংপুর বিভাগের আট জেলায় প্রতিদিন গড়ে ৬৫ জন মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। দিন দিন করোনা সংক্রমণ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। আক্রান্তদের অনেকেই ছুটছেন হাসপাতালে। তবে সেবা নিয়ে অসন্তোষ আছে রোগীদের। বিশেষ করে আইসিইউ বেডের সংকটের কথা বলছেন অনেক রোগীর স্বজনরা।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, রংপুর বিভাগের ৮ জেলার জন্য রংপুরে করোনার বিশেষায়িত হাসপাতাল ও দিনাজপুরে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মাত্র ২৬টি আইসিইউ বেড রয়েছে।

রোগীর স্বজনসহ বিশিষ্টজনরা বলছেন, একটা বিভাগে করোনা আক্রান্ত মুমূর্ষু রোগীদের চিকিৎসা সেবার জন্য এই সংখ্যা একেবারেই অপ্রতুল।

স্বাস্থ্যবিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গত ৫ দিনে করোনায় আক্রান্ত হয়ে বিভাগে ১০ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার একদিনেই মারা গেছেন ৪ জন। এদের মধ্যে তিনজন রংপুর কোভিড হাসপাতালে, একজন গাইবান্ধায়।

আরও উদ্বেগজনক বিষয় হচ্ছে, করোনায় আক্রান্তদের আইসোলেশনে রাখার কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না স্বাস্থ্য বিভাগসহ প্রশাসন। ফলে সংক্রমণের হার বাড়ছে। অপরদিকে, করোনা পরীক্ষা করার ব্যাপারে রংপুর বিভাগের ৮ জেলার কোথাও বুথ খুলে নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে না। ফলে নমুনা দেওয়ার জন্য মানুষকে বিভিন্ন স্থানে ছোটাছুটি করতে হচ্ছে। রিপোর্টও পাওয়া যাচ্ছে দেরিতে। ফলে করোনা হয়েছে কি হয়নি এটা জানতে জানতেই সংক্রমিত হচ্ছে রোগীর পুরো পরিবার।

পুরো বিভাগের জন্য রংপুর ও দিনাজপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রয়েছে মাত্র দুটি পিসিআর মেশিন। এই দুটি মেশিন দিয়ে প্রতিদিনের সংগ্রহ করা নমুনাগুলো পরীক্ষাও সম্ভব হচ্ছে না।

রংপুর মেডিকেল কলেজ বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ও সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, শনিবার পর্যন্ত রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ২শ ২৮ জন।

স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, করোনার নমুনা সংগ্রহে দীর্ঘসূত্রিতার কারণে করোনা পজিটিভ প্রতিবেদন পাওয়ার আগেই নিশ্চিত হতে না পারায় আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে তার পরিবারের অন্য সদস্যরা করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে।

করোনায় আক্রান্ত হয়ে মুমূর্ষু রোগী যাদের আইসিইউ দরকার তা পাওয়া যাচ্ছে না বলে রোগীর স্বজনরা অভিযোগ করেছেন। এ ব্যাপারে রংপুর ডেডিকেটেড করোনা আইসোলেশন হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. নুরন্নবী জানিয়েছেন, এখানে ১০টি আইসিইউ বেড রয়েছে শনিবার পর্যন্ত সেখানে ৯ জন রোগী চিকিৎসাধীন আছেন। এছাড়া কোভিড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ৪৭ জন রোগী।

আর দিনাজপুরের করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে আইসিইউ বেড আছে ১৬টি। রংপুর বিভাগে মোট ২৬টি আইসিইউ বেড আছে যা দিয়ে কোনোভাবে মানসম্মত এবং প্রয়োজনীয় জরুরি চিকিৎসা সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে স্বাস্থ্য বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

এদিকে রংপুর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ও পিসিআর প্রধান অধ্যাপক ডা. নুরন্নবী লাইজু জানিয়েছেন, রংপুর ও দিনাজপুর মেডিকেল কলেজে দুটি পিসিআর মেশিন আছে। প্রতিটির দৈনিক সর্বোচ্চ ক্ষমতা ১৮৮টি নমুনা পরীক্ষা। এ দিয়েই রংপুর বিভাগের ৪টি করে জেলা সামাল দিচ্ছে একেকটি পিসিআর মেশিন।

রংপুরের সিভিল সার্জন ডা. হিরম্ব কুমার জানান, কয়েকদিন ধরে করোনা সংক্রমণের হার বেড়েছে। সকলকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে ও মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।

রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. আহাদ আলী জানান, করোনা আক্রান্তের সংখ্যা সম্প্রতি অনেক বেড়ে গেছে। অনেক আক্রান্ত রোগী আসছে হাসপাতালগুলোতে। আইসিইউ বেডের সংকট সৃষ্টি হচ্ছে।

এবি/রাতদিন

মতামত দিন