শীতার্তরা আরামে ঘুমাবে বলে, মধ্যরাতে বাড়ী বাড়ী ঘুরছেন জলঢাকার ইউএনও

হিমেল হাওয়া আর হাড় কাঁপানো  শীতে গ্রামের মানুষজন রাতে যখন ছেড়া কাথায় নিজেকে আবদ্ধ করে দু’চোখ এক করার চেষ্টা করে। গরম কাপড়ের অভাবে কারো ঘুম এলেও অনেকেই বিনিন্দ্র রাত কাটায়। তাদের কথা ভেবে তাদের পাশে দাড়িয়েছে নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলা প্রশাসন। গভীর রাতে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে প্রকৃত শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে।

মঙ্গলবার, ১ ফেব্রুয়ারি উপজেলার বিভিন্ন এতিমখানা ও পাড়ায় কম্বল বিতরণ করে উপজেলা প্রশাসন।

গভীর রাতে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নেতৃত্বে কম্বল নিয়ে হাজির হন পূর্ব খুটামারা দারুস সুন্নাহ জামিয়া গফুরিয়া মুসফেকিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানায়। সেখানে কর্মরত কেতাব বিভাগের শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন ও সরিফুল ইসলাম জানান, ১৯২৭ সালের প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান এটি। এখানে তিন’শ জন আবাসিক ও দু’শ জন অনাবাসিক শিক্ষার্থী আছে। এমন কিছু শিক্ষার্থী আছে যাদের একখানা ছেড়া কাঁথাই সম্বল। তাদেরকে সরেজমিন ইউএনও স্যার কম্বল দিয়ে এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন।

ওই এলাকার বৃদ্ধা ভাকোবালা ও নয়নী রানী। বাড়ীর বাইরে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করতে শরীরে তাপ দিচ্ছিলেন তারা। ইউএনও’র গাড়ী দেখে তারা বাড়ীর ভিতরে যেতে থাকলে তাদেরকে ডাক দিয়ে কম্বল গায়ে পড়িয়ে দেন ইউএনও মাহাবুব। এসময় ভাকোবালা ও নয়নী রানী আবেগে আপ্লুত হয়ে বলেই ফেলেন, স্যার, তোমার মাথাটা আগায় দেন তো। তোমার মতো স্যারের এসময়ে খুবই প্রয়োজন। হঠাৎ করি এই ঠান্ডায় কম্বল পামো ভাবি নাই। তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে সরকারকে আশীর্বাদ করি। তারা এভাবেই খবর রাখলে হামরা সন্তুষ্ট।

অপরদিকে দক্ষিণ কাজিরহাট বালকা হাফিজিয়া মাদ্রাসায় আবাসিক এতিম বালিকাদের হাতে কম্বল তুলে দেওয়া হয়। কম্বল বিতরণকালীণ উপস্থিত ছিলেন উপজেলা প্রকৌশলী মাহাবুবুর রহমান ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড আহবায়ক আসাদুজ্জামান স্টালিন।

জলঢাকা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহাবুব হাসান জানালেন, আমাদেরকে সেই অমর বাণীটি মনে রাখতে হবে,‘ জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর”। এটা তারই ধারাবাহিকতা। আমরা নিজের আরামকে উপেক্ষা করি বলেই, কিছু শীতার্ত রাতে আরামে ঘুমাচ্ছেন এটাই আমাদের কাছে বড় তৃপ্তির, বড় শান্তির।