সম্মাননা পেলেন ১৫ বীরাঙ্গনাসহ ৩৭ নারী

রংপুরে মহান মুক্তিযুদ্ধের বীরাঙ্গনা ও নির্যাতিতা ৩৭ নারীকে সম্মাননা দেওয়া হয়েছে। তাদের এ সম্মাননা দিয়েছে সাহিত্য-সংস্কৃতি ও সামাজিক সংগঠন ‘ফিরে দেখা’।

শুক্রবার, ০৮ জানুয়ারি দুপুরে জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে তাদের এ সম্মাননা দেওয়া হয়। এতে রংপুর, নীলফামারী, লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামের ১৫ বীরাঙ্গনা ও ২০ নির্যাতিতাকে সম্মাননা স্মারকসহ নগদ অর্থ ও শীতের পোশাক তুলে দেন অনুষ্ঠানের অতিথিরা।

সম্মাননাপ্রাপ্ত বীরাঙ্গনাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন রংপুরের রূপালী রানী সিংহ, মনছুরা খাতুন, কুড়িগ্রামের ফাতেমা বেগম, খুকি বেগম, মজিদা বেগম, গেন্দী বেওয়া, শ্রীমতি তরু বেওয়া, বছিরন বেগম, খোতেজা বেগম, সালেহা বেগম, দেলো বেওয়া, লালমনিরহাটের জ্ঞানবালা, মোসলেহা বেগম, রেজিয়া ও শেফালী রানী।

এছাড়া গেজেটভুক্ত নয় এমন নির্যাতিতাদের মধ্যে কুড়িগ্রামের সুরজ্জন বেওয়া, আবিরন বিবি, মেহেরজান, আছমা বেগম, খোতেজা বেগম, সাহেরন বিবি, আয়শা বেগম, ময়না বেগম, সৈয়দপুরের মর্জিনা বেগম, আয়েশা বেগম, কিরণ বালা, গেনো দা বর্মনী, ললিতা রানী, বেগম আরা, নসিবন বেওয়া, রেজিয়া বেগম, সন্দেশ হাপন, নবিয়া খাতুন, আজিমা, আজিফা, নূরজাহান ও ছবিয়াকে অনুষ্ঠানে সম্মানিত করা হয়।

সরকারি নির্দেশনা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি ছিলেন সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম মুক্তিযুদ্ধ ৭১ রংপুর জেলা সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহাদত হোসেন, ‘ফিরে দেখা’র উপদেষ্টা বীরমুক্তিযোদ্ধা সুশান্ত চন্দ্র খান, বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর হোসেন, লেখক মনোয়ারা বেগম, বেগম রোকেয়া কলেজের বাংলা বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক মোহাম্মদ শাহ আলম, সাংবাদিক ও লেখক আফতাব হোসেন, কথাসাহিত্যিক রানা মাসুদ, ভাস্কর ও গল্পকার অনীক রেজা।

ভার্চুয়ালে যুক্ত ছিলেন ব্যাংক অব আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট কবি সিনথিয়া খান। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মাসুদ রানা সাকিলের সঞ্চালনায় এতে সভাপতিত্ব করেন ‘ফিরে দেখা’র উপদেষ্টা রেজাউল করিম মুকুল।

এছাড়া বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সহ-সভাপতি এএসএম হাবিবুর রহমান, কবি তাসমিন আফরোজ, সহ-সাধারণ সম্পাদক সাহিনা সুলতানা, সাহিত্য সম্পাদক ড. শাহ সুলতান তালুকদার, সহ-সাহিত্য সম্পাদক মইনুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক শহীদুর রহমান, সদস্য দেলোয়ার হোসেন, হামিদা শারমিন ও আবির শারমিন আক্তার প্রমুখ।

‘ফিরে দেখা’র দাতা সদস্য আমেরিকা প্রবাসী কবি সিনথিয়া খানের প্রজাপতি মন কাব্যগ্রন্থের বিক্রয়লব্ধ অর্থে সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হয়।

‘ফিরে দেখা’র সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরে সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চার পাশাপাশি সমাজ সেবামূলক বিভিন্ন কর্মকাণ্ড করে আসছে। সংগঠনটি ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। রংপুর নগরের সেন্ট্রাল রোডে কার্যালয়। রংপুরের কবি, সাহিত্যিক, লেখক, সংস্কৃতিকর্মী ও সমাজ উন্নয়নকর্মীদের সম্মিলন ‘ফিরে দেখা’ সংগঠন ঘিরে।

মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের সহযোগীদের হাতে নির্যাতিত আরও ৬১ জন বীরাঙ্গনাকে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দিয়েছে সরকার। এ নিয়ে বীরাঙ্গনার সংখ্যা উন্নীত হয়েছে চারশ জনে।

গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করেছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) ৭০তম সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ স্বীকৃতি পেয়েছেন বীরাঙ্গনারা।

স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ৬১ জন বীরাঙ্গনা নারী মুক্তিযোদ্ধার মধ্যে কিশোরগঞ্জে একজন, মৌলভীবাজারে একজন, নাটোরে ১২ জন, পিরোজপুরে একজন, ময়মনসিংহে একজন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একজন, বগুড়ায় একজন, ঠাকুরগাঁওয়ে দুজন, পটুয়াখালীতে ১৫ জন, সাতক্ষীরায় একজন, খাগড়াছড়িতে একজন, মাদারীপুরে একজন, বরগুনায় একজন, ফরিদপুরে একজন, বরিশালে একজন, কুষ্টিয়ায় একজন, সিলেটে ১৩ জন, গোপালগঞ্জে দুজন ও খুলনায় একজন।

সরকার বীরাঙ্গনাদের মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তারা প্রতি মাসে ভাতাসহ মুক্তিযোদ্ধাদের মতো অন্যান্য সব সরকারি বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবেন।

গত বছরের ২৯ অক্টোবর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান হানাদার বাহিনী, তাদের দোসর রাজাকার, আলবদর, আলশামসসহ অন্য সহযোগীদের হাতে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতিতদের বীরাঙ্গনা হিসেবে গেজেটভুক্তির জন্য আবেদন আহ্বান করেছিল মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়।

এনএ/রাতদিন

মতামত দিন