সৈয়দপুরের একমাত্র সিনেমা হলটি দর্শক পাচ্ছে না

নীলফামারীর সৈয়দপুরে ঈদের ছবিতেও দর্শক মিলছে না। এবারের ঈদে ভাল ব্যবসার আশা নিয়ে এ শহরে চালু থাকা একমাত্র সিনেমা হলটির মালিক ‘পাসওয়ার্ড’ ছবিটি এনেছিলেন।

তবে আশানুরূপ দর্শক হলমুখী হচ্ছে না। ফলে মোটা অংকের টাকা লোকসান গুনতে হবে বলে আশঙ্কা করছেন তামান্না সিনেমা হলের পরিচালক মো. মাহবুব আলী ঝন্টু।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাণিজ্য সমৃদ্ধ ও শ্রমিক অধ্যূষিত এ শহরটিতে এক সময় বিজলী টকিজ, লিবার্টি, গ্যারিসন, তামান্নাসহ চারটি সিনেমা হল ছিল। তবে এর মধ্যেই দর্শকের অভাবে শহরের তিনটি সিনেমা হল বন্ধ হয়ে গেছে।

এক সময়ের অভিজাত সিনেমা হল ‘বিজলী টকিজ’টিও অনেক আগে বন্ধ হয়ে গেছে। সেখানে বর্তমানে গড়ে তোলা হচ্ছে অত্যাধুনিক সুপার মার্কেট ‘চৌধুরী টাওয়ার’। যদিও এ টাওয়ারের মালিক পক্ষের সেখানে একটি সিনেমা হল করার পরিকল্পনায় রয়েছে বলে জানা গেছে। একই অবস্থা লিবার্টি সিনেমা হলেরও। বর্তমানে সেখানেও গড়ে তোলা হয়েছে সৈয়দপুর শিল্প সাহিত্য সুপার মার্কেট। সৈয়দপুর সেনানিবাসের গ্যারিসন সিমেনা হলটিও বন্ধ করে সেখানে সেনা কমিউনিটি সেন্টার করা হয়েছে।

শহরের শের-এ-বাংলা সড়কে অবস্থিত ‘তামান্না সিনেমা হল’টিও এখন নিভু নিভু অবস্থা । এটি মালিকের কাছ থেকে ভাড়ায় নিয়ে চালাচ্ছেন শহরের অফিসার্স কলোনী এলাকার মাহবুব আলী ঝন্টু। তিনি ও তার পরিবার দীর্ঘ প্রায় ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সিনেমা হল ব্যবসা পরিচালনায় জড়িত।

সিনেমা হলের অফিস কক্ষে কথা হয় তাঁর সাথে। তিনি বলেন, ‘‘এবারের ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সাকিব খানের ‘পাসওয়ার্ড’ ছবিটি এনেছিলাম বড় আশা করে । শুধুমাত্র ঈদের দিন চারটি শো’তে লক্ষাধিক টাকার টিকিট বিক্রি হয়। এর পরদিন থেকে হলে ক্রমান্বয়ে দর্শক কমতে থাকে। মঙ্গলবার, ১১জুন সান্ধ্যাকালীন ৬ টার শো’তে মাত্র চার হাজার টাকার মতো টিকিট বিক্রি হয়েছে। এখন চলছে বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলা। যে বয়সের মানুষ সিনেমা হলে আসেন, এখন তারা মূলতঃ বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলা নিয়ে মেতে আছেন।’

তিনি জানান, সিনেমা হলের মালিককে মাসে ভাড়াদিতে হয় ৪০ হাজার টাকা। স্টাফ ১২জনের বেতন, বিদ্যুৎ বিল, কাস্টমস্ ভ্যাট, পৌর কর দিয়ে কিছুই থাকেনা। গেল রমজান মাসে লোকসানে হল চালাতে হয়েছে। আশা ছিল এবারের ঈদের ছবিতে হয়তোবা আগের লোকসান উঠে আসবে। কিন্তু সে আশায় গুড়ে বালি। কারণ সাকিব খানের এ ছবিটি মোটা অংকের টাকায় আনা হয়েছে।

সৈয়দপুরের সংস্কৃতিকর্মী শেখ রোবায়েতুর রহমান রোবায়েত বলেন, ‘সিনেমা হলে গিয়ে ছবি দেখবেন সে অবস্থা আর এখন নেই। এখনকার বাংলা চলচ্চিত্রগুলোতে কোন ভাল কাহিনী নেই। মানুষের জীবন ঘনিষ্ঠ ও কাহিনী নির্ভর ছবি তৈরি হচ্ছে না। তাছাড়া এখন সিনেমায় অশ্লীলতা পরিপূর্ণ। ফলে আগের মতো পরিবার পরিজন নিয়ে সিনেমা হলে গিয়ে এখন আর ছবি দেখা সম্ভব হয় না। ফলে মানুষ সিনেমা হল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।’

এসকে/রাতদিননিউজ