সৈয়দপুরে কৃষকের ঘরে নেই ঈদ আনন্দ

আর দুই দিন পড়ে মুসলমানদের পবিত্র ঈদুল ফিতর। অথচ নীলফামারীর সৈয়দপুরে কৃষকদের ঘরে নেই ঈদ আনন্দ। কারণ ধানের দাম নেই।

আর ধানের দাম না থাকায় কৃষকরা তাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য ঈদের কেনাকাটাও করতে পারছে না। তাই কৃষক পরিবারগুলোর ঈদ কেনাকাটায় ভাটা পড়েছে। এতে করে ধানের দর পতনের প্রভাব পড়েছে ঈদের বাজারেও।

বাজারে ধানের মূল্য পড়ে যাওয়ায় ঈদের বাজারে কৃষক পরিবারের সদস্যদের আনাগোনা নেই বললেই চলে। ঈদ বাজারে যারা কেনাকাটা করছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষই হচ্ছে সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকুরিজীবী ও ব্যবসায়ী পরিবারের।

জানাগেছে, কৃষকরা অনেক ঝুট ঝামেলার পর তাদের উৎপাদিত ধান ঘরে তুলেছেন ঠিকেই। কিন্তু বর্তমানে হাট-বাজারে ধানের দাম নেই। তবে নীলফামারীর সৈয়দপুরে গত পাঁচ-ছয় দিন আগে সরকারিভাবে ধান কেনা শুরু হয়েছে। কিন্তু তারপরও কৃষকদের কাছে সরাসরি ধান কেনা হচ্ছে না। কৃষকদের কাছ থেকে কম দামে ধান কিনে মজুত করছেন সিন্ডিকেট ও মিল মালিকরা। বর্তমানে গ্রামাঞ্চলের হাট-বাজারে প্রতি মণ মোটা ধান ৪০০ টাকা এবং চিকন ধান ৫২০ টাকা মণ বিক্রি হচ্ছে। তাই কৃষকরা ধান বিক্রি করে ঈদের কেনাকাটা করতে পারছেন না। কারণ এখন বাজারে ধানের যে দাম তা উৎপাদন খরচের চেয়েও কম। এই দামে ধান বিক্রিয় করে চরম লোকসান গুনতে হচ্ছে।

এদিকে ঈদে পরিবারের সদস্যদের জন্য নতুন জামা কাপড়, সেমাই, চিনি, দুধ ও মাংসসহ অন্যান্য খরচপাতির ব্যয়ভার মেটানো তাগিদ থেকে কম দামে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন কৃষক।

উপজেলার কাশিরাম গ্রামের কৃষক হালিমদার রহমান জানান, এবার ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। এতে মহাখুশি আমরা। ধান বিক্রিয় করে পরিবার পরিজনদের জন্য ঈদের কেনাকাটা করবো। কিন্তু ধানের দাম না থাকায় আমাদের আশায় যেন গুঁড়েবালি।

নিউ ক্লথ মার্কেটের থ্যাংকস ক্লথ স্টোরের মালিক একরামুল হক জানান, আশি ভাগ ক্রেতা গ্রামে বাস করেন। তারা আর্থিক সংকটে বাজারে আসতে না পারায় বেচাকেনা রমজানের শেষ ভাগেও জমে ওঠেনি।

শহীদ ডা. সামসুল হক সড়কের তৈফর পোশাক বিক্রেতা ঢাকা ফ্যাসনের মালিক নাজমুল হোসাইন মিলন জানান, ঈদকে ঘিরে যত টাকায় গার্মেন্টস পোশাক কেনা হয়েছে তার অর্ধেকও এখনো বিক্রি হয়নি।

শহরের অত্যাধুনিক সুপার মার্কেট সৈয়দপুর প্লাজার তৈরি পোশাক ব্যবসায়ী আইনুল হক জানান, ধানের ভালো ফলনের খবরে আমরা ব্যবসায়ীরা ফুরফুরে মেজাজে ছিলাম। মনে করেছিলাম এবারে ধান কাটা মাড়াই মৌসুমে ঈদ-উল-ফিতর। ভাল বেচা কেনা হবে। কিন্তু ধানের দাম না থাকায় আশার আলোয় কালো মেঘ জমে হতাশা ভর করেছে।


শহরের সুপার মার্কেটের আমেদ ক্লথ স্টোরের ব্যবসায়ী আবিদ হোসেন ডলার বলেন, বিগত ঈদে ১৫ রমজান থেকে কেনাকাটা তুঙ্গে উঠত, এবার সেই ভাব দেখছি। কেনাকাটা করছেন কেবল শহরের চাকুরিজীবীরা। ধানের দাম না থাকায় গ্রামের মানুষের ভীড় তেমন নেই। ধানের দাম নেই বলে কৃষক পরিবারগুলো মার্কেট মুখী হচ্ছেন না। এতে ঈদ বাজারের ব্যবসায় মন্দা চলছে।

এ বিষয়ে সৈয়দপুরের কৃষক নেতা রুহুল আলম জানান, দেশে কৃষক বাঁচানোর কৃষি নীতি না থাকায়, কৃষক পরিবারগুলোর এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ধান কাটা মাড়াইয়ের মৌসুম শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সরকারিভাবে ন্যায্য মূল্যে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনা শুরু হলে ধানের বাজারে এমন ধস নামতো না। সে জন্য কৃষক বাঁচাতে এবং অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সরকারকে কৃষকবান্ধব কৃষিনীতি প্রণয়নসহ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে।

এইচএম/ রাতদিন