৩০ জনের নাম বলেছেন পাপিয়া, আছেন মন্ত্রী এমপি সচিবও

ব্যবসায়ী, সরকারি আমলা, মন্ত্রী,এমপিসহ ৩০ জন ব্যক্তির নাম বলেছেন সদ্য বহিষ্কৃত যুব মহিলা লীগ নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়া। এরা নিয়মিত পাপিয়ার আস্থানায় যেতেন। এই তালিকায় কয়েকজন বিরোধী দলের সংসদ সদস্যও আছেন। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তাদের অনেকেরই নাম বলেছেন পাপিয়া।

এছাড়াও ওয়েস্টিন হোটেল কর্তৃপক্ষের সরবরাহ করা সিসি টিভি ফুটেজ, পাপিয়ার কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া গোপন ভিডিও থেকেও বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছেন তদন্তকারীরা। তালিকায় নাম আসা ব্যক্তিদের বিষয়ে তদন্ত শেষে ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে। মানব জমিনকে উদ্ধৃত করে বাংলা রিপোর্টের এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে আসে।

গোয়েন্দা সূত্রে প্রাপ্ত একটি তালিকায় দেখা যায়, পাপিয়ার আস্তানায় নিয়মিত যেতেন এমন ব্যক্তিদের মধ্যে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীও আছেন তালিকায়। সরকারি ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্য আছেন ১০ জন। সরকারের সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তা আছেন ৫ জন। এছাড়া বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ী আছেন ৬ জন। এছাড়াও ছাত্রলীগের একজন সাবেক সভাপতি এবং স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক একজন নেতার নাম আছে এই তালিকায়। টেন্ডারকাণ্ডে গ্রেপ্তার ঠিকাদার জি কে শামীমও সেখানে নিয়মিত যেতেন।

ওই তালিকায় গুরুত্বপূর্ণ একটি দপ্তর সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তার নামও রয়েছে যিনি গণমাধ্যমের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে থাকেন। এছাড়া সংসদের বিরোধী দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতার নাম এসেছে যিনি শ্রমিক সংগঠনেরও নেতা। এমনকি একজন টেলিভিশন টকশোর আলোচকের নামও রয়েছে এই তালিকায়।

তালিকায় আরো দেখা গেছে, একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব থাকা মন্ত্রীর উপস্থিতির তথ্যও পাওয়া গেছে। সেখানে যাওয়া প্রতিমন্ত্রীর মধ্যে একজন খুলনা বিভাগের, একজন বৃহত্তর রংপুরের এবং ময়মনসিংহ বিভাগের একজন রয়েছেন।

ওই তালিকায় ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, নীলফামারী, রংপুর, কুষ্টিয়ার, মাগুরার, ময়মনসিংহের, নেত্রকোনা ও মানিকগঞ্জ জেলার একজন করে সংসদ সদস্যর নাম রয়েছে।

ব্যবসায়ীদের মধ্যে এফবিসিসিআই’র একজন সাবেক সভাপতি, একজন সাবেক পরিচালক, বাংলাদেশ নিট ডায়িং ওনার্স এসোসিয়েশনের একজন নেতা, একজন প্রতিষ্ঠিত জুয়েলারি ব্যবসায়ী, একজন গার্মেন্টস ব্যবসায়ী ও একজন পাট ব্যবসায়ীর নামও রয়েছে।

একজন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা, যিনি সাবেক হলেও এখনো সংগঠনটির নেতৃত্ব নির্বাচনে ভূমিকা রাখেন বলে আলোচনা আছে। এছাড়া সাবেক স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য সম্প্রতি পদ হারিয়েছেন। পরিবহন ব্যবসার সঙ্গেও তিনি জড়িত। এমন দুজনেরও নাম রয়েছে সেই তালিকায়।

গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে রয়েছেন এমন একজন সচিবের নাম ওই তালিকায় রয়েছে। অন্য একজন সচিবের নাম এসেছে যিনি কৃষিভিত্তিক পণ্যনির্ভর একটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে রয়েছেন। ভোগ্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকা একটি মন্ত্রণালয়ের সচিবের নাম এসেছে এই তালিকায়। তথ্য ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা একটি মন্ত্রণালয়ের সচিবের নামও এই তালিকায় আছে। অন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের সচিবও আছেন এই তালিকায়।

তদন্তের দায়িত্বে থাকা র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল শাফী উল্লাহ বুলবুল জানান, পাপিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদে যেসব তথ্য পাওয়া গেছে তা নিয়ে তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

প্রসঙ্গত, গত ২২ ফেব্রুয়ারি যুব মহিলা লীগ নরসিংদী জেলার সাধারণ সম্পাদক শামীমা নূর পাপিয়াকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। রাজধানীর একটি পাঁচতারকা হোটেলে আস্তানা তৈরি করে, নারী, মাদক অস্ত্র ব্যবসাসহ নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছিলেন। অনৈতিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি তার আস্তানায় আসা ব্যক্তিদের গোপন ভিডিও সংগ্রহ করে তা প্রকাশের ভয় দেখিয়ে মোটা অঙ্কের অর্থ আদায়েরও অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। পাপিয়ার অপরাধ জগতের বিস্তারিত তথ্য জানতে দুই মামলায় স্বামী সুমনসহ পাপিয়াকে ১৫ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।

জেএম/রাতদিন