কোথাও ঝুলছে গাঁদা ফুলের মালা, কোথাও উড়ছে হরেক রকম বেলুন। পেছনের দৃশ্যপটে লাল-নীল কালিতে লেখা, ‘মোকাররম ও জেসমিনের গায়েহলুদ।’ এর সামনে বসে বর-কনে হাতে হাত রেখে কাটলেন কেক। রাত নামতেই তাঁদের হাত রঙিন হয়ে উঠল বন্ধুদের দেওয়া হলুদে। সাউন্ড সিস্টেমে তখন বাজছে- ও আমার বন্ধু গো, চিরসাথি পথ চলার।
অন্য দশটি গায়েহলুদের অনুষ্ঠানসূচির মতোই স্বাভাবিক। তবে পার্থক্য বলতে গায়েহলুদের এই অনুষ্ঠান কোনো কমিউনিটি সেন্টারে কিংবা ঘরের চৌহদ্দিতে বা রেস্টুরেন্টে হয়নি। এই অনুষ্ঠানের সাক্ষী হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল হয়েছে।
মোহাম্মদ মোকাররম হোসাইন ও জেসমিন নাহার নামের এই বর-কনের দুজনের বাড়িই রংপুরে। বর মোকাররম হোসাইন পড়াশোনা করেছেন রংপুর কারমাইকেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ইংরেজি বিভাগে। আর কনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগে অধ্যয়নরত। কনের বন্ধুদের আয়োজনে বঙ্গমাতা হলেই হয় তাঁদের গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান।
সম্প্রতি দুই পরিবারের মতে তাঁদের বিয়ের সিদ্ধান্ত হয়। সে অনুযায়ী গত ১৮ অক্টোবর তাঁদের বিয়ের অনুষ্ঠান হয় রংপুরের বদরগঞ্জে।
ক্যাম্পাসেই তোদের গায়েহলুদের অনুষ্ঠান করতে হবে- বন্ধুদের এমন আবদার ফেলতে পারেননি মোকাররম ও জেসমিন। বন্ধুদের চাওয়া অনুযায়ী পহেলা নভেম্বর বঙ্গমাতা হলে গায়েহলুদের অনুষ্ঠানের দিন নির্ধারণ করা হয়।
ওই দিন বিকেল থেকেই কনের ক্যাম্পাসের হলের বন্ধুরা নেমে পড়েন হল সাজাতে। বিকেল ৩ টা থেকেই শুরু হয় অনুষ্ঠানের মূল আয়োজন। হলুদ রঙের পাঞ্জাবি পরা মোকাররম আর হলুদ শাড়িতে সাজা জেসমিন কে প্রথমেই হলের নিচতলায় বরণ করে নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের বঙ্গমাতা হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা। এরপর ঐতিহ্যবাহী ঢাকাইয়া রিক্সায় চড়িয়ে তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয় কার্জন হলে । অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া বন্ধুরাও সেজেছিলেন গায়েহলুদের সাজে।
এর পর রাত ৮ টায় খাওয়াদাওয়া আর কেক কাটা হয়। সেই পর্ব শেষ হতেই তাঁদের হাত ভরে যায় বন্ধুদের শুভকামনা জানিয়ে লেখা কাগজ আর নানা উপহারে। এরপর সব বন্ধু কনের হাতে মেখে দেন মেহেদির আঁচড়। এসময় ডাকসুর বঙ্গমাতা হল সংসদের ভিপি রিকি হায়দার আশা, ঢাবির বিতার্কিক ও সংগঠক তাসনিম মোশারফ তন্দ্রা, রিমি, লাবন সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
একই সুতোয় বাঁধা পড়া দুজনেই এর আগে বন্ধুদের কাছ থেকে এমন ভালোবাসা পাবেন, ভাবেননি। তাই তো মোকাররম হোসাইন এই প্রতিবেদকে বলেন, যে ক্যাম্পাসে বউয়ের পড়াশোনা, সেখানেই গায়েহলুদ। সারা জীবন মনে রাখার মতো মুহূর্ত। বন্ধুদের জন্যই হয়েছে সবকিছু। কনে জেসমিন নাহারের কন্ঠেও একই সুর, শুধুই বন্ধুদের ধন্যবাদ দেওয়া ছাড়া অনুভূতি ব্যক্ত করার ভাষা হারিয়েছেন তিনি।
জেএম/রাতদিন