করোনাভাইরাসের বিস্তাররোধে আজ মঙ্গলবার, ২৪ মার্চ সন্ধ্যা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সব ধরনের ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকবে।
দুপুরে চলমান পরিস্থিতি নিয়ে রেল ভবনে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন।
মন্ত্রী জানান, যেসব রেল বিভিন্ন বেজ স্টেশন থেকে ঢাকায় এসেছে, তারা আবার ফিরে যাওয়ার পর এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। তবে তেল, খাদ্যসহ জরুরি পণ্য পরিবহনের জন্য সীমিত আকারে ট্রেন চলবে।
তিনি বলেন, এ ছাড়া অনেক ট্রেন পথিমধ্যে চলমান অবস্থায় আছে। ট্রেনগুলো ঢাকায় এসে আবার তাদের নির্ধারিত ছাড়ার প্রান্তে চলে যাবে। তবে সন্ধার পর থেকে শিডিউল অনুযাযী কোনো ট্রেন চলবে না।
এর আগে আজ (মঙ্গলবার) সকালে লোকাল-মেইল ট্রেন বন্ধের ঘোষণা দিয়েছিল বাংলাদেশ রেলওয়ে। পরে করোনাভাইরাসে সংক্রমণ এড়াতে জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডাকে সারাদেশে অনির্দিষ্ট কালের জন্য ট্রেন চলাচল বন্ধ ঘোষণা দেয়া হলো।
সংবাদ সম্মেলনে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোফাজ্জেল হোসেন, বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক শাসসুজ্জামান, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে আগামী ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সারাদেশে যাত্রীবাহী নৌচলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। নৌপরিবহন সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরী জাগো নিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, আজ থেকে আগামী ৪ এপ্রিল পর্যন্ত যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল বন্ধ থাকবে। এ বিষয়ে লঞ্চ মালিকরাও একমত হয়েছেন। যে যেখানে আছেন সেখানেই থাকবেন। করোনাভাইরাস সংক্রমণরোধে এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
অপরদিকে আগামী ২৬ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সারাদেশে গণপরিবহন বন্ধ (লকডাউন) থাকবে। মঙ্গলবার সকালে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এক ভিডিও বার্তায় এ কথা জানান।
এদিকে মঙ্গলবার আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, করোনাভাইরাসের সংক্রমণরোধের কার্যক্রমে দেশের সব জেলায় সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
করোনার বিস্তাররোধে আগামী ২৯ মার্চ থেকে ২ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। সোমবার (২৩ মার্চ) বিকেলে সচিবালয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এ তথ্য জানান।
গত ডিসেম্বরের শেষ দিকে চীনের উহানে প্রথম শনাক্ত হওয়া করোনাভাইরাস এখন বৈশ্বিক মহামারি। বিশ্বের ১৯৫টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে এ ভাইরাসটি। এখন পর্যন্ত এই প্রাণঘাতী ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা তিন লাখ ৭৮ হাজার ৮৪৮ এবং মারা গেছে ১৬ হাজার ৫১৪ জন। অপরদিকে চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে এক লাখ দুই হাজার ৬৯ জন।
করোনাভাইরাসে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ইতালিতে। ইউরোপের এই দেশটিতে মৃত্যুর মিছিল থামছেই না। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে নতুন করে ৬০১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে সেখানে মৃত্যু ছয় হাজার ৭৭। দেশটিতে নতুন করে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা চার হাজার ৭৮৯। ফলে এখন পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৬৩ হাজার ৯২৭। এছাড়া চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ৭ হাজার ৪৩২ জন।
এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে সবচেয়ে বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে চীনে। দেশটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৮১ হাজার ১৭১ এবং মারা গেছে তিন হাজার ২৭৭ জন।
বাংলাদেশে এ ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে গত ৮ মার্চ। এরপর দিন দিন এ ভাইরাসে সংক্রমণের সংখ্যা বেড়েছে। সর্বশেষ হিসাবে দেশে এখন পর্যন্ত ৩৪ জন আক্রান্ত হয়েছেন, মারা গেছেন চারজন।
করোনার বিস্তাররোধে এরই মধ্যে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে সভা-সমাবেশ ও গণজমায়েতের ওপর। চারটি দেশ ও অঞ্চল ছাড়া সব দেশ থেকেই যাত্রী আসা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
বন্ধ করে দেয়া হয়েছে দেশের সব বিপণিবিতান। এ ছাড়া মুলতবি করা হয়েছে জামিন ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি ছাড়া নিম্ন আদালতের বিচারিক কাজ। এমনকি মাদারীপুরের শিবচর উপজেলাকে লকডাউনও ঘোষণা করা হয়েছে।