ক্রিকেট তার ধ্যান-জ্ঞান, ক্রিকেট অন্তঃপ্রাণ মানুষ পৃথিবীতে তিনি একা নন। অনেক বহু; কিন্তু খেলা ছাড়া শুধু অনুশীলনের কথা যদি বলা হয়, তাহলে বলতে হবে মুশফিকুর রহীম সবার আগে। তার মত অনুশীলনে এত মনোযোগী ক্রিকেটার খুব কম। বলেই দেয়া যায় এ মুহূর্তে বাংলাদেশে আর একটিও নেই।
যিনি প্র্যাকটিস করতে- বেশি সময় ধরে ব্যাটিং, কিপিং অনুশীলন করতে অনেক বেশি পছন্দ করেন। করেনও। আর তাই তো তারকা তকমা গায়ে মাথা ক্রিকেটারদের মধ্যে মুশফিকুর রহীমই একমাত্র ক্রিকেটার যিনি শেরে বাংলায় গত ৮ দিন ব্যক্তিগত অনুশীলনে দৌড়াদৌড়ি করলেন। জিমে গেলেন। নিজেকে ফিট রাখার সম্ভাব্য সব কিছুই করলেন। আবার শেরে বাংলার ইনডোরে ব্যাটিংটা ঝালিয়েও নিলেন।
সেই চার মাস প্রায় ঘরে বন্দী। ঘরে বসে রানিং মেশিনে দৌড়াদৌড়ি, জিমের সামগ্রী দিয়ে হালকা জিমওয়ার্ক এবং ফ্রি-হ্যান্ড এক্সারসাইজে কাটলো ১০০ দিনের বেশি। সেখান থেকে বেরিয়ে অবশেষে হোম অব ক্রিকেটে আসা এবং ফিজিক্যাল ট্রেনিংয়ে নিজেকে ব্যস্ত রাখলেন তিনি।
১৯ তারিখ থেকে শুরু করে আজ ২৬ জুলাই- আট দিন শেরে বাংলায় ইমরুল কায়েস, মোহাম্মদ মিঠুন, শফিউল ইসলাম, তাসকিন আহমেদ এবং মেহেদি রানার সাথে অনুশীলনে কেমন কাটলো? কেমন ছিল প্র্যাকটিসের ধরণ?
তারা চারজন শুরু করে শেষ পর্যন্ত ৬ জনে শেষ করলেন। কখনো কি মনে হয়েছে, সংখ্যাটা অনায়াসে বাড়ানো যেত? ঈদের পরে অনুশীলন করতে এসে কি আরও বড় বহর আশা করেন?
এসব নিয়ে রোববার অনুশীলন শেষে কথা বলেছেন মুশফিক। প্রথমেই জানিয়ে দিয়েছেন, করোনার কারণে যে পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটেছে, তারওপর আসলে কারো হাত নেই। তবে তার এই সপ্তাহর বেশি সময়ের অনুশীলনে খুব ভাল সময় কেটেছে।
আজ শেরে বাংলায় অনুশীলন শেষে তাৎক্ষণিক অনুভুতি প্রকাশে মুশফিকের কথোপকোথন বলে দিচ্ছিল, এ যেন বনের পাখি খাঁচায় বন্দি থেকে আবার মুক্ত বিহঙ্গ হয়ে আকাশে ওড়ার মতই আনন্দ ভিতরে।
তাকেসহ ক্রিকেটারদের ব্যক্তিগত অনুশীলন করার সুযোগ দেয়ার জন্য বিসিবিকে ধন্যবাদ জানাতেও ভুল হয়নি। ‘বিসিবিকে অসংখ্য ধন্যবাদ, তারা আমাকে এমন সুযোগ করে দিয়েছে। বিশেষ করে, ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগকে, তারা এত সুন্দর করে পরিকল্পনা মাফিক ৭-৮ দিন- যাই অনুশীলন করেছি ভালো ছিল।’
করোনা নিয়েও কথা বললেন মুশফিক। তিনি বলেন, ‘প্রথমতঃ এটা আমাদের হাতে নেই। আসলে যেটা আমদের হাতে নেই সেটা নিয়ে চিন্তা করাটা আমি মনে করি বোকামির কাজই হবে। বিশেষ করে, শেষ ৪ মাস সবার জন্যই কঠিন সময় গেছে। আমরা চেষ্টা করেছি, বাসা থেকে যতটুকু কাজ করা যায়। আমার জীবনে প্রথমবার দেখা এমন চারমাস পুরো লকডাউন।’
ক্রিকেট বিশ্ব ধীরে ধীরে স্থবিরতা কাটিয়ে সচল হতে শুরু করেছে। সে উপলব্ধি থেকেই মুশফিক আশার প্রহর গুনছেন, ঈদের পরও এমন ৫-৬ জনের বহর নিয়ে অনুশীলন শুরু করার।
‘বিশ্বের অনেক দেশেই ক্রিকেট ফিরছে, যদিও তুলনা করতে গেলে তাদের সাথে আমাদের প্রেক্ষাপটটা ভিন্ন। তবুও আমি আশাবাদী, ঈদের পর যদি পরিস্থিতি আরেকটু উন্নতি হয় আমরা যেন আবার একসাথে একটা দল হয়ে অনুশীলন শুরু করতে পারি।’
এ ক’দিনের অনুশীলন খুব ভাল হয়েছে। সময়টা খুব ভাল কেটেছে, তা জানিয়ে মুশফিক বলেন, ‘আমি ৭-৮ দিন যেটা করেছি, এটা খুবই ভালো হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ। চার মাস ইনডোরে কাজ করা আর বাইরে কাজ করা সম্পূর্ণ আলাদা। চাচ্ছিলাম যে রোদের মধ্যে আউটফিল্ডে যেন রানিংটা করা যায়। ফিটনেস ওয়ার্কের সাথে স্কিল ওয়ার্কও। এটা হয়েছে যার জন্য বিসিবিকে ধন্যবাদ।’
জাতীয় দলের অনুশীলন ছাড়াও নিজ নিজ উদ্যোগে অনুশীলন করা প্রসঙ্গে মুমফিকের মত, ‘আসলে এটা যার যার ব্যক্তিগত ব্যাপার; কিন্তু আমাকে জিজ্ঞেস করা হলে বলবো, শুরুর দিকে একটু দ্বিধায় ছিলাম। একটু ভয় লাগছিল যে কিভাবে হবে আর আদৌ হবে কি না। যেহেতু মিরপুরের আশেপাশে সব জায়গায় রেড জোন। তো এখানে এসে যেটা দেখলাম, আসতে আসতে আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়েছে। এখানে এত সুন্দর পরিবেশ ও এত পরিষ্কার। আমি মনে করি, ব্যক্তিগত অনুশীলন বাকি ৫-৬ জন আমার সাথে করেছে তারাও একমত হবে। খুবই ভালো একটা পরিবেশ ছিল, আমরা অনুশীলনের সুযোগ পেয়েছি।’
মুশফিকের আশা, ‘সবাই আত্মবিশ্বাসী থাকে আমরা মনে হয় গ্রুপে ১৫-২০ জন না হলেও দুইজন, চারজন, পাঁচজন বা সাতজন একসাথে অনুশীলন করতে পারি।’
এনএ/রাতদিন