জন্ম হতদরিদ্র পরিবারে, তার ওপর আবার শারীরিক প্রতিবন্ধী। জন্মের এক বছর পরে আগুনে পুড়ে যায় দুই হাতের সবগুলো আঙ্গুল। এখন দুই হাতেরই কোন আঙ্গুল নেই। তাই ঠিকভাবে কলমও ধরতে পারে না। তারপরও হাতের জড়ানো আঙ্গুলের ফাঁকে কলম চেপে রেখে লিখে মেধাবী সুপন রায় এবারের এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ – ৫ পেয়েছে।
তাঁর এখন স্বপ্ন আকাশের দিকে। একজন বড় প্রকৌশলী হয়ে হতদরিদ্র বাবা-মায়ের মুখে হাসি ফোটানো এবং দেশ সেবার নিজেকে নিয়োজিত করা। কিন্তু আদৌ কি সেই স্বপ্ন পূরণ হবে তার !
হতদরিদ্র বাবা-মায়ের পক্ষে এখন তাঁর কলেজের খরচ মেটানোই একেবারে অসম্ভব ব্যাপার। কলেজের ভর্তি নিয়ে চরম দুশ্চিতায় পড়েছেন সুপন ও তাঁর পরিবার।
সৈয়দপুর উপজেলার বাঙ্গালীপুর ইউনিয়নের বাড়াইশাল নয়াপাড়ার বাসিন্দা কৃষ্ণ রায় ও কল্পনা রাণী রায় দম্পতি। তাদের নিজের কোন বসতভিটা পর্যন্তও নেই। তাই সরকারি খাস জায়গায় পরিবার নিয়ে বসবাস। সুপন রায়ের মা কল্পনা রাণী রায় বলেন, তাঁর তিন ছেলে। ছেলেরা সবাই অত্যন্ত মেধাবী ও লেখাপড়ার প্রতি অনেক আগ্রহী। বড় ছেলে সুজন রায় ঢাকা পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট থেকে সিভিলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পন্ন করেছেন। আর মোঝো ছেলে সুমন রায় অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে সৈয়দপুর সরকারি কলেজে পড়ছে। সবার ছোট সুপন রায়।
তিনি জানান, সুপন যখন এক বছর বয়সী শিশু, তখন প্রতিবেশির বাড়ির বাইরে রাখা আগুনে সুপনের দুই হাত পুড়ে যায়। এতে তাঁর দুই হাতের সবগুলো আঙ্গুলই পুড়ে জড়িয়ে পড়েছে। ছোটবেলা থেকে সুপন অত্যন্ত চালাক চতুর ও মেধাবী।
বড় ভাইদের লেখাপড়া করতে দেখে তাঁরও লেখাপড়া ভীষণ আগ্রহী হয়ে উঠে। তাই তাঁর মেধা ও আগ্রহ দেখে বাড়ির পাশের চৌমুহনী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভর্তি করে দেয় বাবা কৃষ্ণ রায়। সেখান থেকে পিইসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় সে। এরপর ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয় লক্ষণপুর স্কুল এন্ড কলেজে। সেখান থেকে জেএসসি পাশের পর এবারে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে সে।
যদিও সুপনের হাতে কলম ধরা কষ্টকর। তাঁরপরও অনেক কষ্ট, চেষ্টা ও আগ্রহে লেখাপড়া করছে সে। এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে সে ও তাঁর পরিবার খুশি হলে তাঁর কলেজের ভর্তি নিয়ে চরম দুশ্চিতায় পড়েছে পরিবারটি। কারণ সুপনের বাবা পেশায় একজন দিনমজুর। নিত্যদিন মানুষের বাড়িতে দিনমজুরী করে যা আয় হয় তা দিয়ে পাঁচ সদস্যের পরিবারের প্রতিদিন দুই বেলা খাবার জোটে না।
এরপরও প্রতিদিন হাঁড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে তিন ছেলের লেখাপড়ার খরচ চালাচ্ছেন তিনি। কিন্তু এখন সুপনের কলেজ ভর্তি, বইপত্র কেনার জন্য এত টাকা যোগাড় হবে কিভাবে এ দুশ্চিন্তায় পড়েছে তার পরিবার।
সৈয়দপুর লক্ষণপুর স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. রেজাউল করিম রেজা বলেন, সুপন রায় শারীরিক প্রতিবন্ধী। তাঁর দুই হাতেরই আঙ্গুল নেই। তবে সে অত্যন্ত মেধাবী ও বিনয়ী। তাঁর লেখাপড়ায় আমরা প্রতিষ্ঠানগতভাবে সার্বিক সাহায্য সহযোগিতা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। এখন কলেজের লেখাপড়ায় তাঁর আরো বেশি আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন পড়বে। আশা করি তাঁর লেখাপড়ায় আর্থিক সহযোগিতায় সমাজের বিত্তশালীরা হাত বাড়িয়ে দিলে তাঁর স্বপ্ন পূরণ হবে।
প্রত্যক্ষভাবে না বললেও মেধাবী সুপনের লেখাপড়া চালিয়ে যাবার জন্য, স্বপ্ন পূরণের জন্য সমাজের সম্পদশালী ও সহৃদয়বান মানুষের আর্থিক সহযোগিতার আকুতিই যেন ঝড়ে পরছিলো তার মায়ের মুখে।
জেএম/রাতদিন