এক রাতের রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টির পানিতে এখনো ডুবে আছে রংপুর মহানগরের অর্ধশত পাড়া-মহল্লাসহ জেলার অধিকাংশ নিম্নাঞ্চল। সৃষ্ট জলাবদ্ধতা নিরসনে কার্যকর কোনো উদ্যোগ না থাকায় কমেনি পানিবন্দি হাজারো মানুষের দুর্ভোগ। বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নেওয়া মানুষের মধ্যে দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও শুকনো খাবার সংকট।
সোমবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়। এর আগে শনিবার রাত থেকে রোববার সকাল পর্যন্ত রংপুরসহ আশপাশের এলাকায় দশ ঘণ্টায় ৪৩৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। যা রংপুরের ইতিহাসে শতাব্দীর সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত।
সরেজমিনে দেখা গেছে, দ্বিতীয় দিনেও নগরীর অধিকাংশ এলাকা পানিবন্দি রয়েছে। কয়েক হাজার পরিবার স্কুল-কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়ে অবস্থান করছে। তাদের মধ্যে জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন খাবার বিতরণ করেছে।
এদিকে নগরীর মুলাটোল থানা মোড়, মুন্সিপাড়া, গোমস্তপাড়া, সেনপাড়া করণজাই রোগ, খলিফাপাড়া, নগর মীরগঞ্জ, হোসেন বাজার, সর্দারপাড়া, বাবুখাঁ, ঈদগাহপাড়াসহ এখনো প্রায় ৫০টি মতো পাড়া-মহল্লায় বৃষ্টির পানি আটকে আছে। এতে ওই সব এলাকায় হাঁটু পানি জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। পানি কমে না আসাতে এখনো কিছু কিছু এলাকায় রাস্তাঘাট, বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান জলমগ্ন হয়ে আছে।
এদিকে নগরীর বেশ কিছু এলাকা থেকে পানি নেমে যাওয়ায় ঘরে ফিরতে শুরু করেছে বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নেওয়া মানুষ। বাড়ি ফিরে নষ্ট হয়ে যাওয়া আসবাবপত্র ও সরঞ্জামাদি শুকিয়ে নিচ্ছেন তারা। কেউ কেউ ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নিতে না পেরে হতাশায় ভেঙে পড়েছেন।
রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টির পানিতে এখনো ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রংপুর সিটি করপোরেশনের ৩৩টি ওয়ার্ডের বেশির ভাগ পুকুর ও খাল বিল উপচে পড়েছে। এতে মৎস্য চাষিদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এখনো পানিতে তলিয়ে আছে বিভিন্ন এলাকার শাক-সবজির ক্ষেতসহ ফসলি জমি। কোথাও কোথাও পানির তোড়ে ভেঙে গেছে রাস্তাঘাট।
এদিকে রংপুর নগরীর জলাবদ্ধতাসহ যে কোনো পানি নিষ্কাশনের একমাত্র মাধ্যম শ্যামা সুন্দরী ক্যানেল এখনো পানিতে উপচে আছে। টইটম্বুর পানিতে নিচু এলাকাগুলোতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় দেখা দিয়েছে মারাত্মক দুর্ভোগ। বেড়েছে পানিবন্দি মানুষদের ক্ষোভ।
তাদের অভিযোগ, আবহাওয়া অধিদফতর থেকে ভারি বর্ষণের আগাম কোনো সতর্কবার্তা দেওয়া হয়নি। আগে জানিয়ে রাখলে হঠাৎ এই দুর্যোগে বিপাকে পড়তে হতো না। পাশাপাশি এমন প্রবল বৃষ্টিপাতের পরও সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ নিরব। এখনো স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বা কেউ তাদের খোঁজখবর নিচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেন। তারা মেয়র ও কাউন্সিলরদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
এদিকে এমন জলাবদ্ধতার কারণ হিসেবে নগরীর শ্যামাসুন্দরী ক্যানেলের নির্বিচারে ভরাট, দূষণ ও দখল হওয়াকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। এছাড়াও ড্রেনেজ ব্যবস্থা থাকলেও তার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে আবর্জনায় ভরে গেছে এসব ড্রেনেজ। ফলে পানি নেমে যেতে পারছে না।
নদী গবেষক ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন, নগরীর ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নসহ পরিষ্কার করতে হবে। শ্যামাসুন্দরী ক্যানেলসহ বিভিন্ন খালগুলোর সাথে নদীর সংযোগের ব্যবস্থা করতে হবে। তাতে দ্রুত পানি নেমে যাবে। নইলে আবারও এমন চিত্র দেখতে হতে পারে।
এ ব্যাপারে রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি।