করোনাভাইরাসের কারণে বন্ধ থাকায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিকল্প উপায়ে টিকে থাকার চেষ্টা করছে। বিশেষ করে বেসরকারি ও ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানগুলো বেশি বিপদে পড়েছে।
বিবিসি বাংলা এক প্রতিবেদনে পূর্ব আফ্রিকার দেশ কেনিয়ায় করোনা পরিস্থিতিতে মুরগীর খামারে রূপান্তরিত হওয়া স্কুলের কথা তুলে ধরেছে। সেন্ট্রাল কেনিয়ান স্কুলের ক্লাসরুমগুলো এক সময় শিক্ষার্থীদের পড়ার শব্দে মুখর থাকলেও এখন সেখানে শুধু মুরগীর ডাক ছাড়া আর কিছু শোনা যায় না। ব্ল্যাকবোর্ডে অংক করার পরিবর্তে লিখে রাখা হয়েছে মুরড়ীর টিকা দেয়ার সময়সূচী।
স্কুলটির মালিক জোসেফ মাইনা বলেন, স্কুলের আয় বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে এটিকে মুরগীর খামারে পরিণত করতে বাধ্য হয়েছেন।
উল্লেখ্য, করোনা পরিস্থিতিতে কেনিয়ায় আগামী বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত স্কুল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
জোসেফ মাইনা বলেন, মার্চে যখন সব স্কুল বন্ধ করে দেয়ার নির্দেশ আসলো তখন থেকেই কঠিন সময়ের মুখে পড়তে হয়েছে। প্রথমে মনে হয়েছিল যে সব কিছু হারিয়ে গেছে, কিন্তু পরে আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম যে টিকে থাকার জন্য আমাদেরকে কিছু করতে হবে।
দেশটির বেসরকারি স্কুলগুলোর আয়ের মূল উৎস হচ্ছে শিক্ষার্থীদের বেতন। এসব ক্ষেত্রে স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ার মানে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের বেতন তোলা সম্ভব হবে না। তারাও শিক্ষক-কর্মকর্তাদের বেতন দিতে পারবে না এবং অর্থনৈতিক সংকটে পড়বে।
অনলাইন শিক্ষণের মাধ্যমে হাতে গোনা কয়েকটি স্কুল তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এতে তারা যে আয় করছে তা শিক্ষকদের মৌলিক চাহিদা পূরণেও পর্যাপ্ত নয়।
কেনিয়ার প্রাইভেট স্কুল অ্যাসোসিয়েশনের (কেপিএসএ) প্রধান নির্বাহী পিটার নডরো বলেন, তিন লাখের মতো স্কুলের মধ্যে প্রায় ৯৫ শতাংশ স্কুলের শিক্ষকদেরকে বিনা বেতনে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। এর সাথে ১৩৩টি স্কুল স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। এতো খারাপ অবস্থা কখনো হয়নি।
খারাপ অবস্থা থেকে বাঁচতে রোকা প্রিপারেটরি নামে মধ্য কেনিয়ার একটি বেসরকারি স্কুল নিজেদের খেলার মাঠকে খামারে পরিণত করেছে।
স্কুলটির প্রতিষ্ঠাতা জেমস কুংগু বলেন, এর আগে কখনো এতো খারাপ অবস্থা তৈরি হয়নি। আগে যেখানে খেলার মাঠ ছিল সেখানে এখন সবজি বড় হচ্ছে। তিনি মুরগীও পালছেন।
তিনি বলেন, আমার অবস্থা অন্য স্কুলগুলোর মতোই। আমার গাড়িতে জ্বালানি ভরার মতো সামর্থ্য নেই। এখানে এখন শিক্ষক বা শিক্ষার্থী কেউ-ই নেই। মানসিকভাবে আমরা অনেক ভেঙ্গে পড়েছি।
মুয়ে ব্রেথ্রেন এবং রোকা- উভয় স্কুলেই মাত্র দুজন কর্মকর্তা রয়েছেন যারা এখন খামারের কাজে সাহায্য করেন।
দুটি স্কুল যেখানে আয়ের বিকল্প পথ খুঁজে নিয়েছে সেখানে মালিকরা শঙ্কায় রয়েছেন তাদের শিক্ষকদের নিয়ে যারা ৫ মাসের বিনা বেতনে ছুটিতে গেছেন। সরকারি স্কুলের কর্মকর্তাদের তুলনায় এই পরিস্থিতি ভিন্ন, কারণ তারা বেতন পায়।
এইচএ/রাতদিন