গুজব একটি সামাজিক ভাইরাস। অ্যান্টিভাইরাস দিয়ে যেভাবে ভাইরাস দমন করা হয়, তেমনি কিছু পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে গুজবও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। মনোবিজ্ঞানীরা এমনটাই বলছেন।
সাধারণত জনসাধারণের ভুল ও অসঙ্গত তথ্যের সংমিশ্রণে তৈরি হয় গুজব। ভুল তথ্য বলতে মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্যকে বোঝায় এবং অসঙ্গত তথ্য বলতে বোঝায় ইচ্ছাকৃতভাবে ভ্রান্ত তথ্য উপস্থাপন করা। গুজবকে ছোঁয়াচে রোগের সঙ্গে তুলনা করলে ভুল হবে না।
কারণ এই রোগগুলো একজন থেকে দু’জন, দু’জন থেকে চারজন, চারজন থেকে আটজন- এমনিভাবে জ্যামিতিক হারে বাড়ে। ঠিক তেমনি গুজবও এক কান থেকে অন্য কানে জ্যামিতিক হারে ছড়িয়ে পড়ে। গুজবের ধর্ম হল এটি ‘যত বেশি প্রচার হবে, তত বেশি শক্তিসম্পন্ন হবে।’
তবে এই প্রচার হওয়াটা নির্ভর করে তথ্য যোগাযোগ মাধ্যমের ওপর। তথ্য যোগাযোগ ব্যবস্থা যত সহজ হবে তত দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে গুজব।
ইন্টারনেট আবিষ্কারের আগে গুজবের সৃষ্টি বা প্রসার একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকত, কারণ তখনকার তথ্য যোগাযোগব্যবস্থা বর্তমান সময়ের মতো এত বেশি উন্নত ছিল না। ইন্টারনেট আবিষ্কারের ফলে তথ্য যোগাযোগব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন এসেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ব্যবহারে গুজব মহামারী আকার ধারণ করছে খুব সহজেই।
জাতি হিসেবে আমরা অনেকটা হুজুগে মাতাল, এটা অস্বীকার করতে পারি না। কোনো বিষয় সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাক বা না থাক, কোনো তথ্য সঠিক নাকি ভুল তা যাচাই-বাছাই না করে হুজুগের বশে ভাইরাল করা হচ্ছে।
কোনো কোনো মহল সবসময় নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার করার জন্য পরিকল্পিতভাবে গুজবকে ব্যবহার করে থাকে। রাজনৈতিক ও ব্যবসা সংক্রান্ত স্বার্থে সবচেয়ে বেশি গুজব ছড়ানো হয়ে থাকে।
এরই অংশ হিসেবে সম্প্রতি একটি মহল ছড়িয়েছিল লবণ সংকটের গুজব। গুজব প্রতিরোধে সচেতনতা ও সতর্কতার বিকল্প নেই।
যেহেতু মানুষ সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশি সক্রিয় সেহেতু সঠিক তথ্য-উপাত্ত ছাড়া কোনো কিছু প্রচার না করা, সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, রাজনৈতিক স্বার্থে মিথ্যা-বানোয়াট তথ্য প্রচার না করা, ‘যা রটে তার কিছু তো ঘটে’ এমন ধরনের বিশ্লেষণ পরিহার করে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করা, মানুষের কমনসেন্স উন্নত করা- ইত্যাদি বিষয়ে গুরুত্বারোপ করলে গুজব নামক সামাজিক ভাইরাস থেকে অনেকটা পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব।
এনএইচ/রাতদিন