ঘর না থাকায় টয়লেটে কোয়ারেন্টিন!

বাড়িতে ঘরের অভাব। তাই করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে নিজের বাড়ির এক টয়লেটে কোয়ারেন্টিনে আছেন এক শ্রমিক। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের পুরুলিয়ার বান্দোয়ানের এই ঘটনা প্রশাসনকে রীতিমত নাড়া দিয়েছে।  তা সত্বেও  মারণ ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে পরিবারকে বাঁচাতে রেড জোন থেকে আসা ওই শ্রমিকের সচেতনতাকে নজির হিসাবে দেখছেন অনেকে।

এর আগে ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে আসা পরিযায়ী শ্রমিকদের কোথাও গাছের ডালে, কোথাও আবার নৌকা, কিংবা ফাঁকা গাছতলায় কোয়ারেন্টিনে থাকার খবর উঠে এসেছে গণমাধ্যমে। তবে এবার সবকিছু ছাপিয়ে  স্বাস্থ্যবিধি মানতে ঘরের অভাবে কোয়ারেন্টিন শুরু  করলেন বান্দোয়ানের যুবক মহাদেব সিং। খবর সংবাদ প্রতিদিন।

দিন সাতেক আগে সাইকেল নিয়ে রেড জোন হাওড়ার আন্দুল থানার লালকুঠি এলাকা থেকে বান্দোয়ানে ফেরেন মহাদেব সিং। তাঁর সঙ্গে ছিলেন আরও সাত জন। মহাদেবের কথায়, ‘ওখানে আমরা বেত ফ্যাক্টরিতে কাজ করতাম। লকডাউনে কাজ বন্ধ যায়। ফলে উপার্জনহীন হয়ে থাকায় কারখানা কর্তৃপক্ষই আমাদের খাবার দিত। কিন্তু গত মাস খানেক থেকে সেভাবে খাবার মিলছিল না। তাই আমরা সাইকেলে যে যার বাড়ি চলে আসি।’

বান্দোয়ানে ফিরেই তাঁরা ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যান। সেখানে তাঁদের স্বাস্থ্যপরীক্ষা হলে ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু গ্রামের মানুষজন তাঁদের ঘরে ঢুকতে বাধা দেন বলে অভিযোগ। তাই গ্রাম থেকে দূরে আলাদা ভাবে থাকার কথা বললে কুঁচিয়ার পাঁচ শ্রমিক ফাঁকা মাঠে ত্রিপল খাটিয়ে থাকা শুরু করেন।

কিন্তু তাতেও বিপত্তি। দিন চারেক আগে কালবৈশাখীর ঝড়বৃষ্টিতে সেই ত্রিপল উড়ে গেলে তখন সকলকে বাড়িতে থাকার কথা বলেন গ্রামের বাসিন্দারাই। কিন্তু সমস্যা হয়ে যায় মহাদেবের। তার কুঁড়ে ঘরে আলাদা হয়ে থাকার জায়গা নেই। বাড়িতে স্ত্রী, ছোট মেয়ে, বাবা ও দুই অবিবাহিত বোন থাকায় তিনি ঠিক করেন, বাড়ির একপাশে থাকা মিশন নির্মল বাংলার শৌচালয়েই(টয়লেট) নিভৃতবাস করবেন। গত চার দিন ধরে সেখানেই তাঁর পরিবারের লোক খাবার পৌঁছে দিচ্ছে। সেই শৌচালয়েই খাটিয়া পেতে রাত কাটাচ্ছেন ওই শ্রমিক।

পুরুলিয়া জেলা পরিষদের সহ–সভাধিপতি প্রতিমা সরেন বলেন, ‘এই ঘটনা একেবারে হৃদয়স্পর্শী। সকলকেই নাড়িয়ে দিয়ে যায়। কিন্তু ওই শ্রমিকের সচেতনতার তারিফ না করে পারছি না। তিনি সচেতনতার উদাহরণ হয়ে থাকবেন।’

এবি/রাতদিন