তুষভান্ডারে ‘অবৈধ’ স্থাপনা গিলেছে পুকুর

লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার তুষভান্ডারে একটি পুকুরকে ঘিরে ‘অবৈধভাবে’ গড়ে ওঠা বিভিন্ন দোকান ও অবকাঠামো অবশেষে অপসারণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।  এসবের মালিকদের সাত দিনের সময়সীমা বেঁধে দিয়ে নিজ দায়িত্বে স্থাপনাগুলো অপসারণ করতে প্রত্যেককে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

বুধবার, ২৬ জুন কালীগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবু সাঈদ এক চিঠিতে এ নির্দেশ দিয়েছেন। ২৫ ব্যক্তিকে ওই চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

‘লিজকৃত অর্পিত সম্পত্তি হতে অবকাঠামো অপসারণ’ বিষয়ে অবৈধ দখলদারদের উদ্দেশ্যে লেখা চিঠিতে বলা হয়েছে, উত্তর ঘণেশ্যাম মৌজার ‘ক’ তফশসিলভুক্ত পুকুর পাড়ে অবৈধভাবে অবকাঠামো/দোকানঘর নির্মাণ করে ব্যবসা করা সম্পূর্ণভাবে বেআইনি ও বিধিবর্হিভূত।

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, অবৈধভাবে গড়ে তোলা এসব অবকাঠামো চিঠি পাওয়ার সাত দিনের মধ্যে নিজ দায়িত্বে অপসারণ করতে হবে। অন্যথায় সেগুলো অপসারণসহ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

‘অবৈধ’ স্থাপনা গড়ে ওঠায় ঢেকে গেছে পুকুরটি। মহাসড়ক থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই দোকানপাটের পিছনে আসলে কী আছে। ছবি : সংগৃহীত

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়কের গা ঘেঁষে থাকা দেবী অমিয়বালা চৌধুরাণীর পুকুরটি (তুষভান্ডার বাজারের ক্যাপ্টেন মোড়ের পুকুর) ঘিরে বছর তিনেক আগে শুরু হয় দোকানপাট নির্মাণ। পুকুরের উত্তর পাশ অর্থাৎ মহাসড়ক ঘেঁষে দোকানপাট নির্মাণ হয় প্রথম দিকে। পরে তা বিস্তৃত হয় পুকুরের পূর্বে আমিনগঞ্জ সড়ক ঘেঁষে। এই দুই পাশে আধাপাকা বিল্ডিংসহ নানা ধরণের দোকানপাট তৈরি করা হয়েছে। ফলে বাইরে থেকে পুকুরটি ঢাকা পড়েছে। এতে একদিকে যেমন মহাসড়কের ওই অংশটি সংকোচিত হয়েছে অন্যদিকে সৌন্দর্য নষ্ট হয়েছে ঐতিহ্যবাহি পুকুরটির।

সম্প্রতি পুকুরটির পশ্চিম প্রান্তও পড়েছে দখলদারদের কবলে। সেখানে আরসিসি পিলারের মাধ্যমে পুকুরের অনেকাংশ দখল শেষে বালু দিয়ে ভরাট করা হয়েছে। আর এর উপরে প্রাথমিকভাবে তৈরি করা হয়েছিল বড় আকারের টিনের চালা। অবশ্য গত মঙ্গলবার, ২৫ জুন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সেখানে গিয়ে ওই টিনের চালা অপসারণ করেছেন।

গত মঙ্গলবার, ২৫ জুন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও কালীগঞ্জের সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবু সাঈদ পুকুরটির পশ্চিমাংশে আংশিকভাবে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেন।

স্থানীয়দের অনেকেই শুরু থেকে পুকুর দখলের উৎসব মানতে পারছিলেন না। তারা বিভিন্নভাবে এর প্রতিবাদও করে আসছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলেছে। এরই এক পর্যায়ে পুকুর দখলমুক্ত করার উদ্যোগ নেয় উপজেলা প্রশাসন। ফলে অনেকেই সাধুবাদ জানাচ্ছেন এ উদ্যোগকে।

বিষয়টি নিয়ে রাতদিননিউজের সাথে বুধবার রাতে কথা হয় সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবু সাঈদের সাথে। চিঠি দেওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে তিনি বলেন, ‘২৫টি দোকান মালিককে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তারা সাত দিনের মধ্যে সেগুলো নিজ উদ্যোগে সরিয়ে না নিলে প্রশাসনিকভাবে দখলমুক্ত করা হবে।’ ঐতিহ্যবাহি পুকুরটি রক্ষায় তিনি এলাকার লোকজনের আন্তরিক সহায়তা কামনা করেছেন।

এবি/রাতদিন