নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার রামডাঙ্গা ফরেস্ট ও সিংগাহাড়া নদীর তীর থেকে তালাবদ্ধ ট্রাংক থেকে উদ্ধার হওয়া শিশুর পরিচয় মিলেছে। জিহাদ হোসেন নামের ১২ বছর শিশুটিকে শ্বাসরোধে হত্যার পর মৃত্যু নিশ্চিত করতে গরম পানিতে চুবানো হয়। এরপর মরদেহ ট্রাংকবন্দি করে দিনাজপুরের বিরল থেকে এনে ডিমলার রামডাঙ্গায় ফেলে দেয়া হয়। রপু পুলিশ ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো(পিবিআই) ৪৭ দিন তদন্ত শেষে এ হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে।
পিবিআই জানায়, এ ঘটনায় জড়িত অভিযোগে ) নিহত জিহাদের বাবা জিয়াউর রহমান, সৎ মা আলেয়া মনি(১৯) ও আলেয়ার বাবা আইয়ুব আলীকে (৫৫) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া পিকআপ চালক ইসমাইল হোসেনকেও(২৬) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ইসমাইলের পিকআপ ভাড়া নিয়ে ট্রাংবন্দি মরদেহ ডিমলায় আনা হয়েছিল।
পিবিআই সূত্রে জানাগেছে, নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার রামডাঙ্গায় সড়কের পাশে গত ১৫ জুলাই একটি ট্রাংক পরে থাকতে দেখে এলাকাবাসি পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ সারারাত সেটি পাহারা দেয়ার পর পরদিন তা খুলে বিছানার চাদর ও কাঁথা মোড়ানো অবস্থায় অর্ধগলিত শিশুর মরদেহটি উদ্ধার করে। মরদেহটি ঝলসানো ও অর্ধ গলিত থাকায় সেসময় পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি। ফলে আঙ্গুলের ছাপসহ বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ শেষে অপ্সাতদের আসামী করে মামলা দায়ের করে। পরে রংপুর পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার এবিএম জাকির হোসেনের নেতৃত্বে একটি দল তথ্যপ্রযুুক্তি ব্যবহার করে প্রায় ১ মাস ১৭ দিন পর অপরাধের কারণ, প্রক্রিয়া এবং নিহত ও হত্যাকান্ডে জড়িতদের পরিচয় শনাক্ত করে।
হত্যাকান্ডের তদন্তে নেমে পিবিআই দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার একটি এনজিওতে কর্মরত নিহত জিহাদের বাবা জিয়াউর রহমানকে গ্রেপ্তার করে। পরে তার স্বীকারোক্তি মতে বিরলে ভাড়া বাসায় থাকা দ্বিতীয় স্ত্রী আলেয়া মনি(১৯) ও শ্বশুর আইয়ুব আলীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এসময় ওই বাসা থেকে একটি ইলেক্ট্রিক ওয়াটার হিটার জব্দ করা হয়।
পিবিআই জানায়, গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে জিহাদের সৎ মা আলেয়া মনি তাকে মেনে নিতে পারছিল না। ফলে দিন দিন তার বাবার কাছেও শিশুটি চক্ষুশীল হয়ে ওঠে। এই অবস্থায় স্বামী-স্ত্রী পরিকল্পিতভাবে গত ১৪ জুলাই রাতে ঘুমন্ত জিহাদকে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। এরপর ওয়াটার হিটারে পানি গরম করে তাতে চুবিয়ে মৃত্যু নিশ্চিতের পর বাসায় থাকা স্টিলের ট্র্যাংকে জিহাদের মরদেহ চাদরে পেঁচিয়ে ভেতরে ঢোকানোর পর বাইরে দুটি নতুন তালা মেরে দেয়। এরপর ১৩ হাজার টাকায় পিকআপ ভাড়া করে সেখান থেকে এনে ট্রাংটি ডিমলার ওই জায়গায় ফেলে পালিয়ে যায়।
পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার এবিএম জাকির হোসেনের জানান, মামলাটি এসআই মো. ইকরামুল হক তদন্ত করছেন। তাকে পিবিআই এর একটি স্পেশাল টিম সহায়তা করছে।
প্রসঙ্গত নীলফামারীর ডিমলায় তালাবদ্ধ স্টিলের ট্রাংক থেকে অর্ধগলিত মরদেহটি গত ১৬ জুলাই দুপুরে উপজেলার ডোমার-ডিমলা সড়কে বালাপাড়া ইউনিয়নের রামডাঙ্গা ফরেস্ট এলাকা থেকে। ট্রাঙ্কের ভেতর ২০১৯ সালের চিকিৎসার কিছু কাগজ পাওয়া গেছে। তাতে বিস্তারিত কিছু লেখা না থাকলেও দিনাজপুরের ঠিকানায় জিয়াউর রহমান নাম উল্লেখ ছিল।
এবি/রাতদিন