পরীক্ষায় পাস নম্বর ৩৩ কেন?

আমাদের দেশে প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক এমনকি কখনো কখনো স্নাতক কিংবা স্নাতকোত্তর পরীক্ষাতেও কৃতকার্য হওয়ার বা পাসের সর্বনিম্ন নম্বর ৩৩। কিন্তু এই সংখ্যাটি ৩৩ কেন? এটি তো ৪০, ৫০ বা ৬০ হতে পারতো। তা না হয়ে পাস নম্বর ৩৩ হওয়ার পেছনে রয়েছে একটি গল্প যা আমাদের জাত্যাভিমানের সাথে জড়িত।

পাস নম্বর ৩৩ প্রথম চালু করা হয়  ১৮৫৮ সালে।  ১৭৫৭ সালে নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে পরাজিত করে ব্রিটিশরা উপমহাদেশের শাসনক্ষমতা গ্রহন করার প্রায় ১০০ বছর পর। ১৮৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহের ফলে কোম্পানি শাসনের অবসান ঘটে ও শাসনক্ষমতা ব্রিটেনের রানীর হাতে চলে যায়। রাজত্বকাল ও শাসনব্যবস্থা টিকিয়ে রাখতে বিট্রিশ সরকার উপমহাদেশের সমাজ ব্যবস্থায় নানা সংস্কারের পরিকল্পনা করেন।

এরই ধারাবাহিকতায় উপমহাদেশে প্রথমবারের মতো মেট্রিকুলেশন পরীক্ষা চালু হয় ১৮৫৮ সালে । কিন্তু পাস নম্বর কত হবে তা নির্ধারণ নিয়ে বোর্ড কর্তৃপক্ষ দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে যায় এবং ব্রিটেনে কনসালটেশনের জন্য চিঠি লেখেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর...

তখন ব্রিটেনে স্থানীয় ছাত্রদের জন্য পাসের নম্বর ছিল ৬৫। সে সময় ইংরেজ সমাজে একটা প্রচলিত ধারণা ছিল ‘The people of subcontinent are half as intellectual and efficient as compared to the British’ অর্থাৎ বুদ্ধি ও দক্ষতায় উপমহাদেশের মানুষকে ইংরেজদের তুলনায় অর্ধেক মনে করা হতো।

এরুপ ধারণা থেকেই মেট্রিকুলেশনের পাস নম্বর ৬৫ এর অর্ধেক ৩২.৫ নির্ধারণ করা হয়। ১৮৫৮ সাল থেকে ১৮৬১ সাল পর্যন্ত পাস নম্বর ৩২.৫ ই ছিল। ১৮৬২ সালে তা গণনার সুবিধার্থে বৃদ্ধি করে ৩৩ করা হয়। সেই থেকে এই ৩৩ নম্বরই চলছে। ফেডারেল পাকিস্তানেও ছিল। বাংলাদেশেও আছে।

এটি একটি লক্ষণীয় ব্যাপার যে, প্রায় দু’শো বছর ধরে কলংকিত এই রীতিই আমরা গর্বের সাথে বয়ে বেড়াচ্ছি। বাংলাদেশে এখনো চালু আছে ব্রিটিশ আমলের লর্ড ক্যানিংয়ের শিক্ষানীতি।

মতামত দিন